ফয়সাল আহমেদঃ ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছেড়েছিলেন প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ। এদের অনেকেই ঢাকা ফিরতে শুরু করেছেন। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা ছাড়লেও কেউ কেউ ঈদ কাটিয়েছেন রাস্তাতেই। ওদের জীবনে আকাশ, ফুল, নদী, ঘরে ফেরা কিংবা প্রিয়জন; কিছুই নেই। ঈদে সকলের নতুন কাপড় আর হরেক রকম আয়োজন নিয়ে যোজন-বিয়োজন
থাকলেও ওদের আক্ষেপ আর প্রত্যাশা ছিলো এক বেলা ভালো খাবার নিয়েই। ঈদের আগে শহরের হোটেল আর সাধারণ মানুষের সাহায্য নিয়ে খাবার পেলেও ঈদ পরবর্তী ফাঁকা এই ঢাকা শহরে
ওরা যেনো আরও বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে উঠেছে। যাপিত জীবনের কোন আক্ষেপ বা না পাওয়ার বেদনা ওদের এখন আর বিষিয়ে তোলে না। ঈদ পরবর্তী ঢাকাতে এমন অসহায় ছিন্নমূল অনেকের
পাশে দাঁড়াচ্ছেন সামছুল আলম সাদ্দাম। নিজের সীমাবদ্ধ সামর্থ্য দিয়ে প্রতিদিন কিছু কিছু মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন এক প্যাকেট খাবার। রাজধানীর খিলগাঁও, মালিবাগ এবং মৌচাকের
আশেপাশের এলাকাগুলোতে ঘুরে প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ থেকে একশ জন অসহায় মানুষের মুখে হাসির ফোয়ারা ছড়াচ্ছেন তিনি।
মালিবাগে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ফরিদা বানুকে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন সামছুল আলম সাদ্দাম। খাবার গ্রহণের এক ফাঁকে ফরিদা বলেন, ''বাবা ঢাকা শহরে এহন মানুষ নাই। কেউ যে ভিক্ষা
দিব তাও পাইনা। দোকানগুলাও বন্ধ। কষ্ট হয় কিন্তু কিছুই করার নাই। ছাওয়াল-পাওয়ালেও ভাত দেয়না আমারে। আমার ঘর-বাড়ি নাই; রাস্তায় খাই, রাস্তাতেই থাহি। বাজান (সামছুল আলম সাদ্দাম)
প্রায় আসে আমার কাছে। খোঁজ নিয়ে খাবার দেয়। আল্লাহ বাজানরে বাঁচায় রাখুক।''
খাবার গ্রহনকালে ইয়াসিন নামের এক পথশিশুর সাথে কথা হলে সে বলে, ''সাদ্দাম ভাইরে আমি চিনি। উনি প্রায় আসে। আমাগো খাবার দেয়। আইসক্রিম কিনে দেয়। ঈদে একটা নতুন জামা
কিনে দিছে। ''
ফজলু মিয়া নামে একজন বলেন, 'অনেক বড়লোক আছে কেউ খোঁজ নেয় না। কেমনে বাইচ্চা আছি সেটা আমি জানি। মাঝে মাঝে বাবাজি আসে। খাবার দিয়ে যায়। খোঁজ খবর নেয়। '
এ বিষয়ে সামছুল আলম সাদ্দামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কথা আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব মানুষকে নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। ওদের
মুখে হাঁসি ফোটাতে না পারলে আমাদের এই আকাশচুম্বী উন্নয়নও মলিন হয়ে পড়বে। ঈদে অনেকেই বাড়ি চলে যাওয়ায় আসলে তারা কিছুটা বিপাকে পড়েছে। শহরের রেস্তোরা গুলো বন্ধ। রাস্তায়
ও তেমন একটা মানুষ নাই। সবকিছু মিলিয়ে তারা কিছুটা সমস্যাতেই আছে। আমি চেষ্টা করেছি আমার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে। আমার এ প্রচেষ্টায় আহামরি কোন পরিবর্তন না হলেও
সমাজের অন্তত পঞ্চাশজন মানুষ হাসুক। একবেলা পেটভরে খাবার পাক। কোন সমাজই অসচ্চলদের পিছনে ফেলে সামএ এগিয়ে যেতে পারেনা। সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.