স্বপন কুমার রায়,খুলনা ব্যুরো প্রধানঃ দাকোপের বাজুয়া সৃতিসৌধ রক্ষণ কমিটির উদ্যোগে ১২ মে শুক্রবার সন্ধ্য ৭ টারদিকে শহীদ স্বরনে মোমবাতি প্রজ্জালন, এক মিনিট নিরবতা পালন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা বাজুয়া বধ্যভুমি সৃতিসৌধ এর সভাপতি অধ্যাপক অসিত সরকারের
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্হিত ছিলেন বাজুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানস রায়।বক্তৃতা করেন বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত, দে,অচিন্ত সাহা, সুব্রত সরকার ,অশোক দাস,শিক্ষক সুদর্শন সহ আরো অনেকে।
খুলনার দাকোপের বাজুয়ায় ১৯৭১ সালের ১২ মে
সংগঠিত হয়েছিল এক নৃশংস অমানবিক গণহত্যা।
৩০ লক্ষ শহীদের আত্নত্যাগের বিণিময়ে দাড়িয়ে আছে বাংলাদেশ তারই একটি অংশ হচ্ছে দাকোপের বাজুয়ার গণহত্যা।
দক্ষিণ খুলনার শিক্ষা সাংস্কৃতির পীঠস্হান শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী বাজুয়া উনিয়নউচ্চবিদ্যালয়ে সংগঠিত হয়েছিল এক নৃসংশ অমানবিক গণহত্যা। সাত পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে রামপাল,মোংলা মোড়েলগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁচার জন্য ভারত গমনে উদ্যেশে আশ্রয় নিয়েছিল হাজার হাজার শরণার্থীরা সবার উদ্যেশ্য ছিল এক সঙ্গে ভারতে যাওয়া।ফলে বাজুয়াকে নিরাপদ আশ্রয়স্হল ভেবেও অনেকে এসেছিলেন।বাজুয়া স্কুলের সমগ্র এলাকা, বাজুয়াহাট আশেপাশের বাড়ী সর্বত্র লোকে লকারণ্য হয়েউঠেছিল। সেসময় এ
অঞ্চলে লঞ্চ-বোট কিংবা নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় ছিলনা।এ সময় নির্মমতম দিনটি আসে।দুটি লঞ্চে করে পাকিস্হানি বাহিনী নামে বাজুয়া স্কুল ঘাটে। তাদের সাথেছিল রাজাকার
আলবদর এর হোতা যার অদ্যক্ষর “ল”। বাজুয়া স্কুলটি ছিল একটি দ্বিতল ভবন সহ বেশ কয়েকটি ভবন।অসংখ পরিবার স্কুলের ভবনের প্রতিটি কক্ষে
আশ্রয় নিয়েছিল।ঘাতকরা এসেই পুরা স্কুলটা ঘিরে ফেলে।আর সেদিন ছিল বাজুয়া সাপ্তাহিকহাট। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করে।মানুষ প্রাণ ভয়ে এদিক -ওদিক ছুড়তে থাকে আরগুলি খেয়ে পাখির মতো মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে রাস্তায়,মাঠে,স্কুলের বারন্দার সবখানে। এই নির্বিচার গুলি থেকে বাঁচতে কেউ নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে,কেউ পাশ্ববর্তী গ্রামের দিকে ছুটতে থাকে।স্কুলের মধ্যে যারা ছিল তাদের পালিয়ে
যাওয়ার সুযোগ ছিলনা। পাকসেনারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যা শুরু করে একই সাথে একই সময়ে এদেশীয় দোসররা শুরু করে লুটপাট, ধর্ষণ।সে এক ভয়ংকর অবস্হা।
সত্যিকার অর্থে মৃত্যুপুরি’তে পরিণত হয়েছিল বাজুয়া। স্হানীয় অনেকের মতে বেলা ৩ টার দিকে পাকসেনারা বাজুয়া বাজারে এই আক্রমনটি চালায়। তারা গুলি করতে করতেই বাজারে নামে
ভীত হয়ে পালাবার চেষ্টা করেছিল তাদের ও মরতে
হয়েছে মিলিটারির গুলিতে।পাক মিলিটারির হাতে
জীবিত অবস্হায় ধরাপড়েছিল পিপুলবুনিয়া গ্রামের হরিপদ মুখার্জী। তাকে পাকিস্হানি সেনারা
নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে সারা শরীর বেয়ানেট দিয়ে খুঁচিয়ে খু্চিয়ে হত্যা করে।আজ ও জানা যায়না গণহত্যায় সঠিক শহীদের সংখ্যা।তবে প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে এ সংখ্যা কোনভাবেই ছয়শত জনের কমনা।