মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃ কখন যে একটু বৃষ্টি নামবে পরিবেশটা ঠান্ডা হবে মানুষের মাঝে স্বস্থি ফিরে আসবে। সূর্য উঠার সাথে সাথেই আলোর ঝলকানি দিতেই যেন তাপমাত্রা শুরু হতে লাগে এমন অভিমত সুন্দরবন উপকূলের সাধারণ মানুষের।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় প্রচন্ড তাপদহে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এক দিকে প্রচন্ড তাপদহ অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। ফলে সব বয়সী মানুষের গরমে বেশ কষ্ট পেতে হচ্ছে।
দিনে ও রাতে তাপমাত্রা তেমন বেশি পরিবর্তন হচ্ছেনা বলে সাধারণ মানুষ মত প্রকাশ করেন। কৃষক ক্ষেতের ফসলের জন্য, সাধারণ মানুষ স্বস্থির পরিবেশের জন্য, গৃহিনী তার রান্নার পানির অভাব মেটানোর জন্য, মৎস্য ব্যবসায়ী তার মৎস্য ঘেরে ও পুকুরে মাছ চাষের প্রয়োজনীয় পানির অভাবের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রচন্ড তাপদহে বিভিন্ন ইউনিয়নে ছোট ছোট নদী, খাল, পুকুর এক প্রকার পানি শূণ্য হয়ে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার পর থেকে সাতক্ষীরায় উপকুলীয় তাপ প্রবাহ বয়ে চলেছে। বর্তমানে ৩৪ থেকে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বা কম বেশি চলছে। একই সাথে প্রচন্ড রৌদ্র, গুমট ভাব, গাছের পাতার নড়ন কম। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে যায়। বাজারে মানুষের উপস্থিতি কম।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন একটানা দীর্ঘ দিন এমন তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে খুব কম দেখা গেছে বা আবার কেহ বলেন দেখেনি।
তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় দিন মজুর শ্রেনির মানুষ প্রত্যহ ঠিকমত কাজ করতে পারছেন না বলে অনেকে জানান। এদিকে কোন কোন এলাকায় পুকুর বা জলাশয় গুলির পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে রান্নার পানি, গোসলের পানির সংকট দেখা যাচ্ছে।শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা নয়ন গাইন বলেন তিনি রান্না ও খাওয়ার পানি পৃথকভাবে ড্রামে ড্রামে ক্রয় করে থাকেন। নকিপুর গ্রামের বাসিন্দা গৃহিনী শর্মিষ্ঠা রানী বলেন তিনি রান্নার জন্য পানি ক্রয় করেন প্রতি ড্রাম ৩০ টাকা ও সুপেয় পানি ক্রয় করেন প্রতি ড্রাম ৪০ টাকা।গরমে দেশি ফল ডাব, তালের শাস, লিচু, আম সহ অন্যান্য ফলের চাহিদা বেড়েছে।
উপকুলের উন্নয়ন সংগঠন লির্ডাসের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল বলেন দিনে দিনে বৈশি^ক তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন। এছাড়া বৃক্ষরাজি কমে যাওয়া, লবন পানির প্রভাব সহ অন্যান্য কারণ উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আর্দ্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে তাপমাত্রার তুলনায় বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। অধিক তাপমাত্রা উদ্ভিত ও প্রাণিকুলের জন্য ক্ষতিকর বলে তিনি বলে উল্লেখ করেন।
প্রচন্ড তাপদহের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পেটের পীড়া সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শ্যামনগর হাসপাতাল সুত্রে প্রকাশ গরমে ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে প্রকাশ বেশ কয়েক মাস যাবত উপকুলের শ্যামনগরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষি ফসল সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পানি সংকট রয়েছে। বিশেষ আউস ফসল, পাট বসত বাড়ির সবজি চাষে পানি সংকটের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন প্রচন্ড তাপদহের কারণে এলাকায় লবনাক্ততার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জুন মাসের ১ম সপ্তাহের বিভিন্ন নদীর পানির লবনাক্ততা পরীক্ষার রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন মুন্সিগঞ্জ কদমতলির খালে লবনাক্ততা পরিমান পেয়েছেন ৪৫.০ডিএস/মি, শ্যামনগরে গভীর নলকুপে লবনাক্ততা পেয়েছেন ৬.৪ ডিএস/মি, ইশ^রীপুর ও ধূমঘাট এলাকার কলকেখালী খালে লবনাক্ততা পেয়েছেন ৪৪.১ ডিএস/মি। এছাড়া অন্যান্য নদীতে পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ পেয়েছেন ৪৬.০ ডিএস/মি ও সর্ব নি¤œ পেয়েছেন ২.৩ ডিএস/মি। অধিক লবনাক্ততা ক্ষতিকর ফসলের জন্য যা তিনি রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন।
উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে বেশ ভাবিয়ে তুলছে বলে। তারা বলেন প্রচন্ড তাপদাহ মানুষ ও প্রকৃতির জন্য খুব কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। উদ্ভিদকুল, মানুষ, প্রাণি সকলের জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি ক্ষতিকর যার ফলে এখনই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে বিরুপ প্রভাব কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলে অভিজ্ঞরা মতপ্রকাশ করেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.