মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ ঠাকুরগাঁও জেলায় এক সময়ের রমরমা বলাকা সিনেমা হলটি এখন পরিণত হয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বাংলা সিনেমার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে কমেছে সিনেমা হলের সংখ্যা। বর্তমানে হল বিমুখ মানুষ টেলিভিশিন-কম্পিউটার সহ নানান মাধ্যমে খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের পছন্দের বিনোদন আর সিনেমা। একটা সময় ছিল সদ্য মুক্তি পাওয়া নতুন বাংলা ছবি দেখতে মানুষ ছুটে যেত সিনেমা হলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দল বেঁধে বাংলা ছবি দেখা বিনোদনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ঈদ-পূজা, পালা-পার্বণে গ্রাম ও শহরের মানুষ সিনেমা হলের সামনে লাইন ধরে দাঁড়াতো পছন্দের সিনেমার টিকিট কাটতে। এমন প্রথাও চালু হয়েছিল যে, নতুন জামাই শ্বশুরবাড়ি গেলে নতুন বউ ও শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতেন!
সিনেমার সেই সোনালী দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের মিলনপুর গ্রামের আবুল কালাম বলেন, ছোটবেলা থেকে ঈদ আসলে আমরা সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যেতাম কর্ণফুলী, বলাকা, আলিয়া ও মৌসুমী সিনেমা হলে— এইসব হলে প্রায় ছবি দেখতে যেতাম।
তিনি আরও বলেন, বেদের মেয়ে জোসনা, খায়রুন সুন্দরী, কমলার বনবাস, কাসেম মালার প্রেম, ঝিনুক মালা, রাখাল বন্ধু, গরীবের সংসার, ভাত দে— এইসব ছবি দেখতে ছুটে যেতাম সিনেমা হলে। এসব সিনেমা আগে সিনেমা হলে গিয়ে দেখতাম। পরে গ্রামগঞ্জে সিডি-ভিসিআর নিয়ে সবাই মিলে একসাথে আবার দেখতাম। এক সময়ের রমরমা সিনেমা হলের অনেকগুলোই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে স্কুল ভবন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে গড়ে উঠতেছে । আবার সেই সব সিনেমা হলের সামনে সিনেমার পোস্টারের বদলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলতেও দেখা যায়। ঠাকুরগাঁও সদরের বলাকা সিনেমা হল এখন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিণত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার সবচেয়ে বড় সিনেমা হল বলাকা সিনেপ্লেক্সের সামনের দেয়ালে সিনেমার পোস্টারের বদলে ঝুলছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যানার।
ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক পার্থ সারথী বলেন, ’৮০ দশকে মানুষ সিনেমা হল সহ সিডি-ভিসিআরে সিনেমা দেখতো। শুক্রবার এলে বিকেল তিনটার সময় কাজকাম গুছিয়ে সাদাকালো টিভিতে বিটিভির প্রচারকৃত সিনেমা দেখতে বসে পড়তো। এখন আর এইসব দৃশ্য চোখে পড়ে না। সিনেমা হল গুলো বন্ধ হলে আমাদের সংস্কৃতি ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম তাদের সংস্কৃতি ভুলে অন্য সংস্কৃতির দিকে চলে যাবে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অরুণাংশ দত্ত টিটু বলেন, সিনেমা হল আর সাদাকালো টিভি একসময় খুব চলতো, এখন আর চোখে পড়ে না। এখন স্মার্টফোন আর ডিশ লাইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের খবর ও বিনোদন ঘরে বসে দেখতে পায় মানুষ। এ বিষয়ে সিনেমা হলটির পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা মির্জা ফয়সাল আমিন বলেন, গত ৩০ বছর আগেই সিনেমা হলটি এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়ে দেয়। পরে যাদেরকে ভাড়া দিয়েছিলাম তারা গত কয়েক বছর ধরে হল বন্ধ রাখছেন। এতে আমাদের এই সিনেমা হল দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিলো। অবশেষে আমরা বাধ্য হয়ে এটা কে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বানাচ্ছি। এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা চাই আবারও সিনেমা হল গুলো চালু হোক। চালু করতে গিয়ে যদি সিনেমা হল মালিকদের ঋণের প্রয়োজন হয় তা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। সিনেমা হল গুলো চালু হলে সুস্থ সংস্কৃতি ফিরে আসবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.