মোঃ সিফাত হোসেন,পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের সরকারী লেবুখালী হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে পায়রা নদীর তীর ঘেঁষে পরিত্যক্ত সরকারি সিএন্ডবি রাস্তার দু'পাশে বসবাস করেন একসময়ের ঐতিহ্যবাহী রশি শিল্পের কারিগররা।
এখন আর আগেকার দিনের মত নেই জমজমাট রশি তৈরির কর্মজজ্ঞ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কলকারখানার দাপট, মূলধন ও শ্রমিক সংকট এবং পায়রার অব্যাহত ভাঙনে বার বার বসতভিটা স্হানান্তরের কারনে এখানকার নিপুণ হাতে রশি তৈরির কারিগররা বাপ-দাদার পুরানো পেশা ধরে রেখেছে। একসময় শতাধিক পরিবার রশি তৈরির কাজে জড়িত ছিল। কালের আবর্তে বর্তমানে কিছু কিছু কারিগররা প্রতিযোগিতা মূলক পেশায় টিকে থাকতে না পেরে অন্যত্র চলে গেছে অথবা এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রশি শিল্পী এগারোটি পরিবার কাজ করছে এবং চটের ব্যবসায় জড়িত আছে সাতটি পরিবার। রশি প্রস্তুতকারী সেলিম খন্দকার, শাহ আলম হাওলাদার, গোবিন্দ দাস, সুধীর মালাকার, বেবি আক্তার ও প্রতিবন্ধী রামদাসহ এগারটি পরিবার এখনো তাদের এ পুরাতন পেশায় আছেন।
এখানকার একজন বয়স্ক রশি কারিগর জয়নাল গাজী বলেন, পায়রা নদীর ভাঙ্গনে বসত ভিটা হারিয়ে বর্তমানে সরকারি পরিত্যক্ত সিএন্ডবি রাস্তার পাশে এসে ঠাঁই নিয়ে পুঁজির অভাবে কোন রকম টিকে আছি।
অপর এক কারিগর সেলিম খন্দকার বলেন, এখন আর এ পেশায় আগের মত ব্যবসা নাই। রশি তৈরীর কাঁচামাল ক্রয়, মূলধনের অভাব, শ্রমিক সংকট ও আধুনিক মেশিনের কারণে তারা প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছেন।
শাহ আলম হাওলাদার জানান, পূর্বে চট্টগ্রাম থেকে রশি তৈরির জন্য পুরান চট ও সাইন জাল কম মূল্যে করে আনা হতো। বর্তমানে ঢাকা থেকে চড়া মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে।
গোবিন্দ চন্দ্র দাস বলেন, প্রতি কেজি পুরানো চট বর্তমানে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় এবং পুরান সাইন জাল ১৫ থেকে ২০টাকায় ক্রয় করা হয়।যাতায়াত খরচ, শ্রমিক ও প্রস্তুত খরচ বাবদ আরো খরচ হয় ১০ টাকা। প্রতি কেজি রশি বর্তমানে গড়ে পাইকারি বিক্রি করা হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
প্রতিবন্ধী রাম দাস বলেন ৫০ বছর যাবত এ পেশায় আছি। রশি তৈরি করে ৫ ছেলে সহ ৭ জনের পরিবার কোনরকম জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় টিকে আছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহায়তা পেলে আমরা আবার এ পেশাকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হব।
কালের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত স্হানীয় লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী লেবুখালী পুরান বাজার এলাকার রশি শিল্প একসময় দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমাদর ছিল। বর্তমানে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে হারাতে বসেছে এ শিল্প। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সম্ভাবনাময় এ রশি শিল্প।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.