মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। ধান প্রধান এই জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতি ধান আবাদ। ধানের জমিতে গাছের ডাল, খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি ও ধইঞ্চার ডাল পোতা হয় একে পার্চিং বলে।সেগুলোর উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসে ফসলের তিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এই পার্চিং পদ্ধতি ফসলের পোকা দমনের জন্য অত্যন্ত কম ব্যয়বিহীন এবং পরিবেশবান্ধব। এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন খরচ ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে পাওয়ায় এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকদের মাঝে। অনেক কৃষক আমন ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে উৎপাদনের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। এ অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের আমন ধান রোপন করেছেন কৃষকরা যেমন বিনা-৭ ধান, ব্রি ধান-৫১, সুমন স্বর্ণ,ধানীগোল,ও বিভিন্ন জাতের চিকন ধান প্রভৃতি।
ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাদের জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন। বর্তমানে তাদের রোপণকৃত ধানগাছগুলো বড় হচ্ছে। এখন সবুজে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠগুলো। আর এই ধানের গাছ কৃষকদের মনে এনে দিয়েছে প্রশান্তি। পার্চিং সাধারণতঃ দুই প্রকারের হয়ে থাকে। ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং আর জীবšত ধইঞ্চার ডাল জমিতে পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং। কৃষকরা তাদের আমন ফসলের তেকে তিকারক পোকা থেকে রার জন্য বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে ফসল রা করেছেন। এসব ব্যবহারে শালিক, বুলবুলি, ফিঙ্গেসহ বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি খেতের পার্চিংয়ের উপরে বসে। সেখান থেকে উড়ে উড়ে গিয়ে তিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রা পাচ্ছে। এছাড়া পরিবেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ধান উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ টি উপজেলায় রানীশংকৈল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ঠাকুরগাঁও সদর সহ পীরগঞ্জ উপজেলার পাকা রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে কৃষকের আমন ক্ষেত সবুজ সতেজ হয়ে উঠেছে ।ক্ষেতে কৃষকরা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর গ্রামের কৃষক মোঃ বদিরুল ইসলাম,জানান ৫ একর জমিতে আমন ধান রোপন করছেন। তার মধ্যে ৩ একর জমিজে সুমন স্বর্ণ ও ২ একর ধানীগোল জাতের আমন ধান রোপন করছেন। কিন্তু আমন ক্ষেতে মাজরা ও গোড়াপঁচা রোগ দেখা দিয়েছে তাই বিষ স্প্রে করছেন। তিনি জানান, তিনি জানান বিষ স্প্রে পাশাপাশি ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। তিনি জানান ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসে ফসলের তিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এই পার্চিং পদ্ধতি ফসলের পোকা দমনের জন্য অত্যন্ত কম ব্যয়বিহীন এবং পরিবেশবান্ধব।কোনো প্রাকৃতিক দূযোগ না হলে এবারো এবারও আমন ধানের ভালো ফলন ও নায্য দাম পাব আশা করছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের খাদেমুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান,আমন ধান রোপনের সময় বৃষ্টি অভাবে শ্যালো ও গভীর নলক’পের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপন করতে হয়েছে।এতে আমারা আমন আবাদ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম কিন্তু ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই বৃষ্টিতে কৃষকের মনে স্বস্তি এনেছে।বর্তমানে ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা দমনে আমি পরিবেশ বান্ধব পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি। এতে আমনের ভালো ফলন আশা করছি। ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও ধান উৎপাদনে বিখ্যাত জেলা। এবছর কৃষকদের আমন আবাদের লক্ষ্য মাত্র অর্জনে ও ভালো ফলনের জন্য আমন ক্ষেতে পার্চিং করা সহ পোকা দমনে যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা দেয়া হয়েছে। আশাকরি ঠাকুরগাঁও জেলায় এবারও লক্ষমাত্রার অধিক উৎপাদন হবে এবং কৃষকরা ধানের ভালো দাম পেয়ে লাভবান হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.