জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও : দীর্ঘ তিন মাস ধরে কুকুরের কামড়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে অসুস্থ নুসরাত।ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে বারবার রেফার্ড করেছেন রংপুরে। কিন্তু টাকার অভাবে নুসরাতের মা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের বাইরে নিয়ে যেতে পারেনি। অর্থাভাবে হচ্ছে না নুসরাতের চিকিৎসা গতকাল সোমবার ( ২৯ নভেম্বর) এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ঢাকা পোস্ট।
এই প্রতিবেদন পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠকের নজরে এলে মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার ছুটে যান ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নুসরাতের কাছে। তিনি নুসরাতের সাথে দীর্ঘক্ষন কথা বলেন। নুসরাতের মায়ের কাছে নুসরাতের বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং নুসরাতের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তার চিকিৎসা করাতে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা লাগলে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন এবং নুসরাতের সকল চিকিৎসা ভার তিনি গ্রহণ করেন।
এ বিষয় ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, পুলিশ আইন-শৃঙ্খলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মানবিক কার্যক্রম করে ।এরই ধারাবাহিকতায় আমরা ঠাকুরগাঁও জেলায় বিভিন্ন ধরনের মানবিক কাজ আসতেছি দীর্ঘদিন ধরে। আমরা গতকাল ঢাকা পোস্ট এর প্রতিবেদনায় থেকে জানতে পারি নুসরাত নামে একটি মেয়ে অর্থ অভাবে চিকিৎসা করাতে পারতেছে না। তখনই আমার ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ তার পাশে তার চিকিৎসার জন্য সকল ধরনের দায়িত্ব নিয়েছি।
মানবিক পুলিশ সুপার এর আগেও ঠাকুরগাঁওয়ের অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তার সামাজিক কাজের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে। মানবিক কাজ করে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। একজন মানবিক পুলিশ হিসেবেই লোকমুখে পরিচিত তিনি।
নুসরাতের পরিবার এমন সাহায্যের হাত পেয়ে, আবার নুসরাত কে নতুন করে বাঁচাতে পারবে বলে আশায় বুক বাধছে।
নুসরাতের মা বলেন আমার বাচ্চা দীর্ঘ তিন মাস ধরে কুকুরকে কামুড়ে অসুস্থ। আমি রংপুর নিয়ে গেছিলাম কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। অনেকের কাছে সাহায্য চাচ্ছি। ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ সুপার আমার মেয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এই বিপদে। তিনি আমার যে উপকার করেছেন এটা আমি সারা জীবনেও ভুলতে পারবো না। আমি দোয়া করি আল্লাহ আমাদের পুলিশ সুপারের মঙ্গল করুক।
ঠাকুরগাঁও জেলার মানবিক পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক এর আগেও ঠাকুরগাঁও জেলায় মানবিক কাজ করে আলোচিত হয়েছেন । ঠাকুরগাঁও জেলায় যে কোন মানুষ বিপদে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ নিত্য দিনেই করেন এই মানবিক পুলিশ সুপার। সর্বদায় অসহায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রমেও সবসময় সাধারন জনগনের পাশে রয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ সুপার ।
জেলায় প্রতি টি বড় ধর্মীয় উৎসব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যবেক্ষন করেন পুলিশ সুপার।
উল্লেখ্যে গত ৪ মাসে ঠাকুরগাঁও বাসীকে চমক দেখিয়েছেন একজন মানবিক পুলিশ উত্তম প্রসাদ পাঠক।তিনি একের পর এক ইতিবাচক কর্মকাণ্ড সৃজনশীলতা, কঠোর পরিশ্রম, মেধা দক্ষতা এবং মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ জনগণের বন্ধুতে পরিণত করেছেন । এমনকি তার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে এ জেলার সাধারণ জনগণ এবং পুলিশ ধীরে ধীরে ভালো বন্ধুতে পরিণত হচ্ছেন। রাখছেন আইনের প্রতি আস্থাও।
ঠাকুরগাঁও জেলায় যোগদানের পর আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।তিনি এ জেলায় এসপি হিসেবে যোগদানের প্রায় চার মাসে ৭৫৩টি মামলা নিষ্পত্তির পাশাপাশি ৭৭টি মোবাইল ও ৬০ জন ভিকটিম উদ্ধার করেছেন। ২১০১টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিষ্পত্তি, ১২২টি নন-এফআইআর প্রসিকিউশন, ১৩১টি আলামত নিষ্পত্তি, ২৮৩টি এনইআর, ৯৫টি পিএন্ডএ জেল প্যারেড-২টি, ৭৫৩টি মামলায় ৯৩৮ জন আসামির মধ্যে ৩৯৪ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার করেছেন। সড়ক পরিবহন আইনে ৩০৫৭টি মামলায় মোট ১,৬৪,২৮,৩০০ টাকা আদায় করার পাশাপাশি ৩৭৬ জন নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীকে সার্ভিস ডেস্কে সেবা প্রদান করেছেন। উঠান বৈঠক ও বিট পুলিশিং করেছেন ৮৭৯০টি, ৫২৫৫টি পাসপোর্ট ভিআর, ৯০৯টি চাকরি ভিআর, ৮৮৫টি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন। এ ছাড়াও ৪০৪৬টি দিবা ও রাত্রিকালীন টহল ও মাদক মামলা ৩৪২টি, ইয়াবা ১৮০৬১ পিস, ট্যাপেন্টাডাল ৩৫৮৭ পিস, গাঁজা ৩০ কেজি ৭৮৭ গ্রাম, ফেনসিডিল ১৩৪৩ বোতল, হেরোইন ৩০.৫২ গ্রাম, চোলাইমদ ৩৭৯ লিটার এবং বিদেশি মদ ৩২ বোতল উদ্ধার করে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এই দায়িত্বের বাইরে তিনি মানবিক কাজও করেন
সাধারণ মানুষ বলছেন হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে অপরাধ প্রবণ এ জেলার দৃশ্যপট। গা ঢাকা দিয়েছে অনেক অপরাধী। অপরাধীদের কেউ কেউ পেশা পাল্টে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে। পুলিশের কৌঁসুলি ভূমিকার কারণেই ভেঙ্গে পড়েছে অপরাধীচক্রের নেটওয়ার্ক। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, জেলার আইন-শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাঠক প্রসাদ এর যোগদানের মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ইতঃপূর্বে এই এই জেলায় ইতঃপূর্বে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যেভাবে ভূমিকা নিতেন বর্তমানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা উত্তম কুমার চৌকস কর্মঠ ও কৌঁসুলি হওয়ায় যুগোপযোগী আধূনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে এবং নিজেই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রনে ব্যাপকভাবে পরিবর্তনে এনেছেন।জেলার তৃনমূল ইউনিয়ন গুলোতে বসবাসকারী জনসাধারনের লাগালে পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে প্রতিটি ইউনিয়নে বিট অফিসার নিয়োগ করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়নে বিট অফিসার নিয়োগ করায় পূর্বের চেয়ে অনেক গুণ বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন তৃণমূলের জনসাধারণ।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2024 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.