আরিফুজ্জামান চাকলাদারঃ ফরিদপুরের কানাইপুর এলাকায় বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। একই পরিবারের নিহত ৪ জন হলেন- বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের মিলন মোল্যা (৪২), তার স্ত্রী সুমি বেগম (৩৫), বড় ছেলে আবু রোহান (৯) এবং ছোট ছেলে আবু সিনান (৬)। মিলন মোল্যা ঢাকা সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিফট অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। মারাত্মক আহত মিলনের মা সুরাইয়া বেগমকে (৫৫) ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাকি নিহত ৯ জনেরও পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- আলফাডাঙ্গার কুসুমদি গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম (৩৫), একই উপজেলার বেজিডাঙ্গা গ্রামের নান্নু মোল্যার স্ত্রী জাহানারা বেগম (৪৫), মিল্টন শেখের স্ত্রী সোনিয়া বেগম (২৮) ও ছেলে নুরানী (২), বোয়ালমারী উপজেলার ছত্রকান্দা গ্রামের মোসা. মর্জিনা বেগম (৭০), আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরবাকাইল গ্রামের তবিবুর রহমান (৫৫), হিদাডাঙ্গা গ্রামের ইব্রাহিম খাঁর স্ত্রী সূর্য বেগম (৪০), সৈয়দ নেওয়াজ আলীর মেয়ে কুহিনূর বেগম (৬০), আলেক সরদারের স্ত্রী শুকুরুন্নেসা (৭০)।
এ ঘটনায় আহত ৬ জনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার কয়েকটি পরিবারের লোকেরা একত্রে একটি পিকআপ ভাড়া করে ফরিদপুর ডিসি অফিস থেকে ত্রাণের টিন আনতে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন বলে নিহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুরের এ্যাবলুম রেস্টুরেন্টের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যশোরগামী ইউনিক পরিবহনের সাথে আলফাডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা ফরিদপুরগামী একটি যাত্রীবাহী পিকআপের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় চারজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে আরও ২ জন মারা যান। নিহতদের মধ্যে ৭ জন নারী, ৩ জন পুরুষ ও ৩টি শিশু রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।
বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নিহত মিলন মোল্যার চাচাতো ভাই রুহুল আমীন বলেন, ফরিদপুর ডিসি অফিস থেকে ত্রাণের টিন আনার জন্য মঙ্গলবার সকালে পিকআপে করে সপরিবারে মিলন মোল্যা ফরিদপুর যাচ্ছিলো। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী কানাইপুরের তেঁতুলতলা এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, ইউনিক পরিবহনের একটি বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে যশোরের দিকে যাচ্ছিল অপরদিক থেকে একটি পিকআপ ভ্যান আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী থেকে ফরিদপুর শহরের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ শব্দ পেয়ে রাস্তায় দৌড়ে এসে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখতে পাই।
ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বোয়ালমারী থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এটি একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং করিমপুর হাইওয়ে থানা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন ফরিদপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।