নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মধু মাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই সাতক্ষীরার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বৈশাখী, গোলাপ খাসসহ সুস্বাধু বিভিন্ন প্রজাতির আম। বৈরী আবহাওয়ায় এ বছর আমের উৎপাদন কম হওয়ায় গত বছরের তুলনায় আমের বাজার অনেক চড়া। মৌসুমের শুরুতেই বাজারে আম উঠায় চাহিদাও একটু বেশি।
সাতক্ষীরার বৃহত্তর আমের হাট শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে প্রতিদিন সকালে গ্রাম থেকে আসছে শতশত ভ্যানভর্তি পরিপক্ব গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ সহ বিভিন্ন জাতের আম। বাগানের গাছ থেকে পেড়ে এসব আম এনে রাখা হচ্ছে আড়তে। সেখান থেকে কিনছেন ক্রেতারা।জেলার বাইরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে এসব আম। ফলে রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ আসপাশের জেলা থেকে ব্যাপারি আসায় নানামুখী কর্মজজ্ঞে মেতে উঠেছে জেলার চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
গত ৯ মে থেকে সাতক্ষীরায় আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ততরের আয়োজনে গাছ থেকে পরিপক্ত পাকা আম পাড়া শুরু হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় গত ১১ মে থেকে গাছ থেকে গোবিন্দভোগ আম ছাড়ানো শুরু হয়। জাত ভেদে আম পাড়া চলবে জুন মাস পর্যন্ত। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রচুর পরিমানে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাস, সরিষাখাস জাতের আম উঠতে শুরু করেছে। বৈরী আবহাওয়া ও তাপ প্রবাহের কারণে এ বছর আমের ফলনও কম হয়েছে। তাই মৌসুমের শুরুতে আমের দামও অনেক চড়া। একই সাথে চাহিদাও অনেক বেশি। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এসব আম কিনতে আসছেন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা। এসব ক্রেতারা আবার অনলাইনের অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন সাধারণ খুচরা ক্রেতার কাছে।
শুক্রবার (১৭ মে) সকালে দেখা গেছে গ্রাম থেকে আসছে সারি সারি আমভর্তি ভ্যান। যতদূত দৃষ্টি যায় ততদূর শুধু আমের ভ্যান। আমের বাজারে তিল ধারণের জায়গা নেই। ক্রেতার ভিড়ও লক্ষ্যণীয়। আমে সয়লাব শহরের সুলতানপুর বড়বাজার। যেদিকে তাকানো যাবে, সেদিকেই আম আর আম।
আম ক্রেতা মোঃ আশরাফ আলী বলেন, সাতক্ষীরার আম মানে ব্র্যান্ড। দেশের অন্য জেলার আমের থেকে সাতক্ষীরার আম সুমিষ্ট এবং স্বাদে অতুলনীয়। আম খেলে যাচাই করা যায়, এটা সাতক্ষীরার আম। সাতক্ষীরার আম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিবছর বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাছাড়া এই আমের কদরও অনেক বেশি রাজধানী ঢাকায়।
আম ব্যবসায়ী সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের এমএ মাজেদ বলেন, তিনি অনলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমের অর্ডার নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কুরিয়ারের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌছে দেন। তিনি বলেন, একেকদিন আমের দাম একেক রকম। কোনদিন দাম বেশি হবে, কোনদিন কমবে-এটা আগে বলা যায় না। তবে এবছর আমের দাম অন্যবারের তুলনায় অনেকটা বেশি।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১শত জন আম চাষি রয়েছেন। সবমিলিয়ে এ বছর ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ।স্থানীয় কয়েকটি জাতের আম দিয়ে মে মাসের ৯ তারিখ থেকে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ন্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রপালি জাতের আম সংগ্রহ করা হবে।
তিনি বলেন,গাছের সব আম একসঙ্গে পাকে না। সুতরাং আমের রং আসার আগে তা না পাড়ার জন্য অনুরোধ করেন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি-খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দী। সম্পাদক/প্রকাশক-রবিউল ইসলাম। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক-সাবিহা প্রমানিক। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ ধানমন্ডি শংকর ঢাকা-১২০৯, মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪, ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩, ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com ।