ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রুহিয়া আজাদ মেলা ৬৫ তম শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে রুহিয়া থানা ও রামনার্থ হাট সংল্গন মেলা মাঠে অনুষ্টিত হয়। মেলা কমিটির সভাপতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব বেলায়েত হোসেন সাধারন সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম সহ সভাপতি ২০নং– রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেলায়েত হোসেন এর সভাপতিত্ব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক এর পক্ষ থেকে সর্দার মোস্তফা শাহীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ঠাকুরগাঁও, মির্জা ফয়সল আমীন সাবেক মেয়র ঠাকুরগাঁও পৌরসভা ও সাধারণ সম্পাদক ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি, বিশেষ অতিথি শেখ জাহিদুল ইসলাম পিপিএম পুলিশ সুপার ঠাকুরগাঁও, এ কে এম নাজমুল কাদের অফিসার ইনচার্জ রুহিয়া থানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোস্তফা কামাল সাবেক চেয়ারম্যান অবিভক্ত রুহিয়া ইউনিয়ন, মোঃ আনছারুল হক যুগ্ম সম্পাদক জেলা বিএনপি ঠাকুরগাঁও, মোঃ আব্দুল জব্বার সভাপতি রুহিয়া থানা বিএনপি, মোঃ জহিরুল ইসলাম রিপন সাধারণ সম্পাদক রুহিয়া থানা বিএনপি প্রমুখ।
মেলা সৃষ্টির ইতিহাস: ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার অন্তর্গত রামনাথ হাট সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছর এক মাসের জন্য এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। রুহিয়া আজাদ মেলাটি আজো উত্তর জনপদের কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ব্রিটিশ আমলে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ১৫৩ নং- লাট ঝারগাঁওয়ের জমিদার শ্রী তারিণী প্রসাদ রায়চৌধুরী তার জমিদার বাড়ীর দক্ষিণে বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী নাগর নদীর কোল ঘেঁষে একটি রাস মন্দির স্থাপন করেন। রাশ পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর পূজার সময় যে লোক সমাগম হতো কালক্রমে তা একটি মেলায় রুপান্তরিত হয় এবং স্থানীয়ভাবে আলোয়াখোয়া মেলা নামে পরিচিতি পায়।ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে জমিদার তারিণী প্রসাদ রায়ের পুত্র শ্রী শ্যামা প্রসাদ রায়চৌধুরী যিনি বাচ্চা বাবু নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন, তারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আলোয়াখোয়া মেলাটি বিস্তৃত পরিসরে আয়োজিত হতে থাকে এবং মেলার খ্যাতি দূর দূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জনশ্রুতি আছে যে, এই মেলায় ভারত বর্ষের বিভিন্ন এলাকা যেমন, ভুটান, নেপাল, কাশ্মির, এমনকি সুদূর ইরান থেকেও লোকেরা বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য সামগ্রী, হাতি, ঘোড়া, উট, দুম্বা, গরু, মহিষ ইত্যাদি কেনা-বেচার জন্য নিয়ে আসত। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভেঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলে নাগর নদীটি দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমারেখায় পরিণত হয়, ফলে আলোয়াখোয়া মেলাটি নাগর নদীর পূর্ব প্রান্তে তৎকলীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কয়েক বছর এভাবে চলার পর সীমানা নিরাপত্তার অজুহাতে তাও বন্ধ হয়ে যায়।পরে ১৯৫৯ খ্রীস্টাব্দে নতুন উদ্যোগে রুহিয়া আজাদ মেলা নামে এটি চালু করা হয়। মেলায় চিত্ত বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, সার্কাস, পুতুলনাচ, মোটরসাইকেল খেলা।