ফাহিম হোসেন রিজু,ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
প্রকৃতির ষড় ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ।এখন হলুদ চাদরে ঢাকা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার মাঠ। মাঠ জুড়ে এখন হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ।
দুচোখ যেদিকে যায়, সে দিকে শুধু মন জুড়ানো সরিষা ফুলের দৃশ্য। গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য গুনগুন করছে। চলছে মধু আহরণের পালা। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে মাঠে নেমেছে।
শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। মানুষের মনকে পুলকিত করছে। সরিষার খেতগুলো দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। এখন শুধু দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে।
তাই ঘোড়াঘাটে ধান বা অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়ছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২হাজার ২৮৪ হেক্টর জমিতে বারি-১৮ জাতসহ বারি-১৪,১৫,৯,১১,১৭ জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে । যা গত বছরের তুলনায় কম। গত মৌসুমে সরিষার আবাদ হয়েছিল ২হাজার ৬৬৫ জেক্টর জমিতে। তবে এ বছরে সরিষার আবাদ কমলেও বেড়েছে আলুর আবাদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘোড়াঘাট পৌরসভার শ্যামপুর এলাকার সরিষা চাষী কাদের আলী বলেন কয়েক বছর আগেও তাদের জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকত বর্তমান সেই জমিতে সরিষা আবাদ করা হচ্ছে। সরিষা ঘরে ওঠানোর পর আবার সেই জমিতে ধান লাগানো হবে।
উপজেলার বুলাকীপুর ইউনিয়নের কুলান্দপুর গ্রামের আইনুল হক ও শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের সাফিকুল ইসলাম বলেন সরিষা চাষ করতে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এপরিমান জমিতে খরচ বাদে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হবে আশা করছি। সরিষা চাষের জন্য জমিতে যে সার ব্যবহার করি পরবর্তীতে বোরো ধান আবাদের সময় সার বেশি দেওয়া লাগে না। এতে আমাদের খরচ কিছুটা কমে যায়।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হোসেন জানান, বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে আমাদের উপজেলার কৃষকরা সাধারণত সরিষা চাষ করে থাকেন । এ ফসল বিক্রি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে ধান রোপন কাজে ব্যয় করেন ।
ইউনিয়নে,ডোঙ্গা,নারায়ণপুর,রামপাড়া,সাতপাড়া,গোবিন্দপুর,গুয়াগাছী,ঘনকৃঞ্চপুর,মারুপাড়া,র্ভনাপাড়া,চাঁদপাড়া,কুমুরিয়া,রামনগর,খাইরুল,লালকীপুর,ইউনিয়নে,কৃঞ্চরামপুর,জয়রামপুর,কলাবাড়ী,বিন্যাগাড়ী, রঘুনাথপুরসহ উপজলোর ও বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠ জুড়ে হলুদে ছেয়ে গেছে ।উপজেলার ভর্নাপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, সরিষা চাষে খরচ কম,লাভ বেশি হওয়ায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি ১ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আশা করছি এবার সরিষা চাষে লাভবান হতে পারব। সরিষা তেল শলীরের পক্ষে খুব উপকারি। তেল, বীজ, মধুর পাশাপাশি সরিষা থেকে উন্নত গো-খাদ্যও তৈরি হয়।
উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ মোমদেল হোসেন বলেন, সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে তথা বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপন করা হয়। সেচ ও সার লাগে কম তা ছাড়া সরিষার পাতা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তেল, বীজ, মধুর পাশাপাশি কৃষকরা সরিষা থেকে উন্নত গো-খাদ্যও তৈরি করতে পারবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. রফিকুজ্জামান জানান সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে তথা বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপন করা যায়। সেচ ও সার লাগে কম তা ছাড়া সরিষার ঝরে পড়া পাতা ফুল একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সরিষা চাষে খরচ কম হওয়ার কারণে সরিষা চাষ করে খুবই লাভবান হওয়া যায়। সরিষা থেকে ভালোমানের তেল উৎপাদন হয়। সরিষা থেকে তৈরী খৈল গরুর খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো হয়। এতে প্রচুর পুষ্টি থাকে।
প্রণোদনার আওতায় আমরা চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫শত কৃষকে বীজ ও সার সরবরাহ করেছি। পাশাপাশি উপসহকরী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
উৎপাদন বাড়াতে এ বছর উপজেলার সকল প্রান্তিক চাষিদের সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজ সরিষার বীজ, সার, বিনামুল্যে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন রেশী এবং ফলন ভালও হবে।
প্রণোদনার আওতায় আমরা চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫শত কৃষকে বীজ ও সার সরবরাহ করেছি। পাশাপাশি উপসহকরী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- রবিউল ইসলাম। প্রধান কার্যালয়ঃ ২২ পশ্চিম-ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল: ০১৭১৫-২০৯৬২৪। ফোন: +৮৮০২৯৫৫১৬৯৬৩ । ই-মেইল: alochitokantho@gmail.com । স্বত্ব © ২০২১ আলোচিত কন্ঠ
Copyright © 2025 আলোচিত কণ্ঠ. All rights reserved.