

বিপ্লব পাল সিলেট : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন পাথর ও বালু মহাল লুটপাটের মুল হোতা পুলিশ কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে থাকায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। ৫ আগষ্টের পর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর, উৎমা ছড়া, ধলাই নদী, শারপিন টিলা ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং,পিয়াইন নদী, চিকারকান্দি, শ্রীপুর পাথর বালি লুটপাটের সাথে জড়িত গোয়াইনঘাট থানার ওসি, এসআইদের ইশারায় প্রকাশ্যে ও রাতে কোটি কোটি টাকার বালি পাথর লুটে সহযোগিতা করলেও তাদের বদলী না করায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস সরকারের দায়িত্ব নিলেও এখনও যেনো গোয়াইনঘাট থানা-পুলিশ অভিভাবকহীন রয়ে গেছেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত পালন করে যাচ্ছেন এই থানার দায়িত্ব। অনুসন্ধানে জানা যায়, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার মো. তোফায়েল আহমদ থানায় যোগদানের পরপরই তার ৭ অফিসারকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বিটের দায়িত্ব দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা এবং সাবেক ওসি রফিকের হিসাব রক্ষক কনস্টেবল আমানকে সাথে নিয়ে শুরু করেন অবৈধভাবে টাকা রোজগারের নানান ফন্দি। এসআই উৎসব কর্মকারকে ১১নং মধ্য জাফলং ইউনিয়ন বিট অফিসারের দায়িত্ব দিলেও তিনি থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কাজ করছেন তার দায়িত্ব অন্যান্য অফিসারদের খুজ খবর নেওয়া কে কোন ইউনিয়ন বিট থেকে কত টাকা চাঁদা আদায় করছে। বেলা শেষে ঐ হিসাব ওসিকে বুঝিয়ে দেয় এসআই উৎসব। ১১নং মধ্য জাফলং ইউনিয়নে সহকারী বিট অফিসার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন এএসআই সাহিদুল তিনি মধ্য রাতে তার ইউনিয়নের বাংলাবাজার, বাউরভাগ এবং নয়াগাং এর পাড়ে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু খেকোদের দিয়ে বালু উত্তোলন করান বিএনপি এক নেতার ভাইকে দিয়ে অবৈধ চোরাচালানের লাইন নিয়ন্ত্রণ করান। প্রতিদিন এএসআই সাহিদুল ও কনস্টেবল রমজান রাতে গিয়ে চোরাচালানের লাইনম্যানের কাছ থেকে টাকার হিসাব নিয়ে থানায় ফেরেন এবং এসআই উৎসবকে হিসাবনিকাশ বুঝিয়ে দেন। এ ছাড়াও অনুসন্ধানে জানা যায়, ১১নং মধ্য জাফলং ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন লোক থানায় অভিযোগ দায়ের করিলে বিট অফিসার হিসেবে সেই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পান এএসআই সাহিদুল কোন মামলার অভিযোগের তদন্ত করলে প্রতি অভিযোগকারীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করেন। কেউ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে উল্টো বাদীকে ভয়ভীতি দেখান। এমনকি তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিবাদীদেরকে তাহার মোবাইল নাম্বার দিয়ে বাজারে কিংবা থানায় এসে দেখা করার অফার দিয়ে আসেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এই দারোগা সাহিদুলের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগীরা আরো জানান যে, অনেক টাকা পয়সা নিয়েও ঐ অফিসার অভিযোগগুলোর বিষয়ে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা না নিয়ে দিনের পর দিন ভুক্তভোগীদের হয়রানি করে আসছেন এবং বার বার টাকা নিতে চাপ দিতে থাকেন। পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিট অফিসারের দায়িত্বে থাকা এসআই ওবায়দুল্লাহ, এএসআই রায়হান হোসেন। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, জাফলংয়ের বিএনপি নেতা শাহ পরান, আওয়ামিলীগ নেতা ও ট্রাক চালক সমিতির সভাপতি ছমেদ মিয়া, আওয়ামিলীগ নেতা কালা শামসু এবং নয়াবস্তি এলাকার আজগর আলীর সাথে লিয়াজু করে জাফলং জিরো পয়েন্ট পর্যটন এলাকা থেকে কোটি টাকার পাথর লুটপাটতে ঐ পুলিশ কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন এবং প্রতিদিন ৪/৬ লক্ষ টাকা চাঁদা নিতেন ওসির নামে। অন্যদিকে চা শিল্পের অন্যতম এলাকা জাফলং চা-বাগান ও জাফলংবাসির একমাত্র স্বপ্নের ব্রীজ যেটি সেলফি ব্রীজ নামে পরিচিত সেই সমস্ত ক্রিটিকাল এলাকায় প্রতি রাতে ৪/৫লাখ টাকার বিনিময়ে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দিতেন বালু খেকো চক্রের সদস্যদের। শুধু তাই নয়, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে নদীতে অভিযান আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়ে ওসির সাথে থাকা কনস্টেবল আমান সাথে সাথে বিষয়টি বিট অফিসারদের জানিয়ে দিতো। বালু উত্তোলন কিংবা পুলিশ লাইনের টাকা তুলতে গিয়ে যদি কেউ পানিতে পরে মারা যান কিংবা নিখোঁজ হন সে সব ঘটনা থেকেও বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো পুলিশ কর্মকর্তারা। বেলা শেষে এ সমস্ত টাকা যেতো ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদের পকেটে। ১৩নং বিছনাকান্দি ইউনিয়ন বিট অফিসারের দায়িত্বে এসআই রাকিব এবং এএসআই তানভীর। তারা থানায় যোগদানের পর থেকে শুরু হয় চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরু-মহিষ, চিনি কসমেটিকস ইত্যাদি থেকে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে বিজিবি সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করায় বিপাকে পড়ে থানার দারোগারা। ভারতীয় চোরাচালানী পণ্য থেকে স্থানীয় লাইনম্যান নিয়োগ দিয়ে ওসির নামে কালেকশন করতেন এসআই রাকিব ও এএসআই তানভীর। বিছনাকান্দি পর্যটন এলাকা থেকে পাথর এবং ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে বালু লুটেও তাঁদের সরাসরি জড়িত রয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব কনস্টেবল ও স্থানীয় লাইন্যান দিয়ে দৈনিক ৩/৪ লক্ষ টাকা ওসির নামে কালেকশন করাতেন। ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিট অফিসারের দায়িত্বে এসআই তরিকুল নিজেকে একজন বিচারক হিসেবে জাহির করেন সবচেয়ে বেশি সীমান্ত চোরাচালান মাদকদ্রব্য আমদানি ও চোরাই পথে ভারতে নারী পাচার হয় তার ঐ বিট সীমান্ত দিয়ে, লুনি-হাজীপুর নদীসহ্ ইউনিয়নের আওতাধীন সকল নদী থেকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকাÐের সুযোগ রয়েছে তার কাছে। তিনি স্থানীয় লাইনম্যানের মাধ্যমে ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদের নামে টাকা কালেকশন করে আসছেন, মিডিয়ায় চোরাচালান ও বালু লুটের বিষয়ে সরাসরি প্রমাণ দিলেও বরাবরই তিনি মিডিয়াকর্মীদের নিকট অস্বীকার করেন। দিন শেষে উপজেলার, ৩নং পূর্ব জাফলং, ১১নং মধ্য জাফলং, ২নং পশ্চিম জাফলং, ১৩নং বিছনাকান্দি ইউনিয়ন থেকে আসা টাকার হিসাব আর ভাগবাটোয়ারায় ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদের রাত কেটে যায়, দিনের বেলায় কোন প্রয়োজনে থানায় গেলে দেখা মিলেনা ওসির। অপরাধ শীর্ষ যখন গোয়াইনঘাট থানা-পুলিশ! তখন সেই উপজেলায় শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি, অপরাধ লুটপাটে কোন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন সাধারণ মানুষ ? বিট অফিসার রাকিবকে চোরাকারবারীরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে আহত করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চোরাকারবারী জানান, এসআই রাকিব ভারতীয় চোরাচালানী ব্যবসার সাথে অতপ্রতোভাবে জড়িত ছিল এবং চোরাকারবারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বেঈমানী করার কারণে তাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিনের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আপোষে নিস্পত্তি করে দেয়া হয়। বাদেপাশা বালু মহালটি ইজারা দেয়া হলেও সেখানে বালু না থাকলেও ইসিএভুক্ত এলাকা থেকে বালু থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এসআই রাকিবকে প্রতি নৌকা থেকে ৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়। যা এএসআই তানভীর এর মাধ্যমে নৌকার মালিক কিংবা ইজারাদারের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। আর এগুলোর নেতৃত্ব দেন যুবলীগ নেতা বিল্লাল। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে গ্রাম কৃষি জমি ও স্থাপনা। স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান,গোয়াইনঘাট থানার ওসি ৫ আগষ্টের পর এই থানায় যোগদানের পর থেকে গরু মহিষ কসমেটিক্স পাচারসহ বিভিন্ন বালি ও পাথর কোয়ারী থেকে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করলে অবৈধভাবে অর্জিত সকল অর্থের তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমরা চাই গোয়াইনঘাট থানার ওসিসহ দুর্নীতিবাজ কয়েকজন দারোগার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিহীত ব্যবস্থা গ্রহন করুক। অফিসার ইনচার্জ সরকার মো.তোফায়েল আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি খুব পেরেশানিতে আছি ভাই,শারীরিকভাবেও অসুস্থ। বদলি হয়ে যাবো আপনাদের থানা থেকে। এসব নিউজ না করলে খুশি হবো এবং পরে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। জানতে চাইলে, এসআই উৎসব তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এসআই তরিকুল বলেন, ১০০ নিউজ করুনঃ আমার কিছুই যায় আসে না টাকা আমি একা খাই নাই। এসআই রাকিব বলেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে এএসআই তানভীর। আমি এইসব বিষয়ে অবগত নয়। তানভীর বলেন, ওসি স্যার ও রাকিব স্যার বিষয়টি অবগত রয়েছে কালেকশনের টাকা আমি একা খাই নাই। এসআই ওবায়দুল্লাহ বলেন, স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে সুযোগ সুবিধা না দেওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। আমি হার্টের রোগী ভাই, অসুস্থ আছি বলে কল কেটে দেন। এ দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উযায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, কোম্পানীগঞ্জের পাথর ও বালি লুটের সাথে থানার কোন কর্মকর্তা জড়িত নয়। উপজেলা প্রশাসন যেভাবে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। সাদা পাথর কিংবা শারপিন টিলা লুটের সাথে আমি কিংব আমার কোন পুলিশ সদস্য জড়িত নই। পাথর লুটের সাথে জড়িতদের প্রায়ই আটক করা হয়েছে। সিলেট পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান এর মুঠোফোনে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।