সারাদেশে

সাতক্ষীরায় ২০ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করলেন মা

 

মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরা ::
সাতক্ষীরায় স্বামীর বহু বিবাহের কারণে স্ত্রীর ভরনপোষণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সুস্থভাবে বাঁচানোর তাগিদে নিজের নবজাতক কন্যা সন্তানকে মাত্র ২০ হাজার টাকায় অন্যের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে হতভাগ্য আশামনি খাতুন নামের এক মায়ের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামে সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে। গত শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।
আশামনি খাতুন (২৫) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেনের চতুর্থ স্ত্রী। সন্তানের সুচিকিৎসা ও দুধ কিনতে না পেরে তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নবজাতক শিশু খাদিজা খাতুনকে নগদ বিশ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন বলে জানান।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আশামনি খাতুনের স্বামী শামীম হোসেন (২৮) আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের সৈয়দ আলী সরদারের ছেলে। পেশায় সে একজন টিউবওয়েল মিস্ত্রী। কখনো কখনো সে ইটভাটায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। শামীম হোসেন গত শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ায় জনৈক আফসার আলীর বাড়িতে তার পঞ্চম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুনকে নিয়ে রাত যাপন করছিলেন। গোপনে বিষয়টি জানতে পারেন আশামনি খাতুন।
এদিকে স্বামীর ৫ম বিয়ের খবর শুনে শুক্রবার ভোরে খোঁজ নিতে ভালুকা চাঁদপুর চলে যান আশামনি খাতুন। সেখানে স্বামী ও তার ৫ম স্ত্রী হোসনে আরার সাথে সাক্ষাৎ মেলে আশামনির। একপর্যায় শামীম ও আশামনির মধ্যে বাকবিতন্ডা ও মারামারি শুরু হয়। স্থানীয়দের উপস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রীর মারামারি বন্ধ হলেও সুকৌশলে পালিয়ে যায় ৫ম স্ত্রী হোসনেআরা খাতুন।
আশামনি জানান, চলতি সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে স্থানীয় কুল্যার মোড়ে একটা ক্লিনিকে তিনি দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেন। স্বামী খোঁজ খবর না নেওয়ায় ক্লিনিকের খরচ, বাচ্চার ঔষধ ও দুধ কিনতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একপর্যায়ে নিজের নবজাতক শিশু খাদিজাকে ১৪ দিন বয়সে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আশাশুনি তেঁতুলিয়া গ্রামের চা বিক্রেতা নিঃসন্তান দাম্পতি রবিউল-কাজলের কাছে নগদ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। নিজের সন্তানকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য তিনি একাজ করেছেন বলে জানান আশামনি খাতুন।
এ বিষয়ে চা বিক্রেতা রবিউলের স্ত্রী কাজল বলেন, আমরা দরদাম করে কয়েকজন স্বাক্ষীর সামনে শর্ত দিয়ে টাকার বিনিময়ে বাচ্চাকে কিনে নিয়েছি। বাচ্চার টিকা কার্ডে পিতা-মাতার নামের স্থানে আমার স্বামী ও আমার নাম দিয়েছি। জন্ম নিবন্ধন সনদে তার নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল। সে এখন থেকে আমাদের পরিচয়ে পরিচিত হবে।
শামীম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এ বিষয়ে আশাশুনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও পরে আর খোঁজ খবর নেইনি বলে জানায় সে।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামছুল আরেফিন বলেন, আমি সম্প্রতি আশাশুনি থানায় নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেখানে যায় সেখানেই বিয়ে করে শামীম। ২০১৬ সালে সে তালা উপজেলা লাউতাড়া গ্রামে সামাজিকভাবে বিবাহ করলেও সে বিয়ে টিকেনি। এরপর উপজেলার বদরতোলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। সে বিয়েও টিকেনি। পরবর্তী নিজের চাচাতো বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করে। বিলকিসকে নিজ বাড়িতে রেখে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে শামীম চতুর্থ স্ত্রী হিসাবে আশামনিকে বিয়ে করে। পরে শামীমকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র চলে যায় বিলকিস।
আশামনি জানান, তার গর্ভে সন্তান থাকাকালীন বদরতোলায় আবারো টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে ছয়মাস আগে হোসেনেআরাকে বিয়ে করে শামীম। মোবাইলে শামীমের সাথে যোগাযোগ করলেও সে তার ও সন্তানের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি নিজের সন্তানকে বিক্রি করেছেন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *