মোঃ খলিলুর রহমান সাতক্ষীরা :
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে চাষিদের চাষের তালিকা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে গম । শ্রমিকসংকট, লাভ কম, ইঁদুরের উপদ্রব,মাড়াইয়ের সমস্যা, ভালো বীজের অভাব ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গম চাষে চাষিরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে গমের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তত্বাবায়নে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের বারি গম-৩০ বারি মৌসুম -২০২১-২০২২ থাকলেও নিজ উদ্যোগে অন্য সব ফসলের মতো গম চাষ খুব কম হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলাতে গত ৬ বছরে শুধু গমের চাষ হ্রস পেয়েছে ৪৮ ভাগ জমিতে। ২০১৬ সালে জেলায় গমের আবাদ হয় ১৫৬৬ হেক্টর জমিতে আর ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮১০ হেক্টরে। এই অবস্থা বিরাজ করছে উপকূলের জেলা গুলোতে।
বিশ্বে খাদ্যশস্য গমের অবস্থান বাংলাদেশে দ্বিতীয়। স্বাধীনতার পর ধানের মতো গম উৎপাদন এলাকা ক্রমান্বয়ে বাড়লেও নানা কারণে আশানুরূপ বাড়েনি। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে গম উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৯ লাখ ৮ হাজার টন,আর বর্তমানে তা ১৪ লাখ টনের কাছাকাছি এসে ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, ভোলা প্রভৃতি জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর গমের জমিতে মারাত্মক ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে যা মোট আবাদি জমির প্রায় ৩ শতাংশ। এ রোগে ফলন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। একের পর এক নতুন রোগবালাই নিরাময় এবং বিপর্যয় উত্তরণের প্রযুক্তি না জানার শঙ্কায় গমের চাষ কমে যায়।
তালা উপজেলার বড়বিলা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫০) বলেন, গম আবাদ বাদ না দিয়া করমো কী? এখন তো গমের ফলন ভালো হয় না। কাটা মাড়াইয়েরও মানুষ পাওয়া যায় না। গমের জমিতে ধান গাড়লেও ভালো হয় না। ওই জন্যে গমের আবাদ বাদ দিয়েছি।
কলারোয়া উপজেলার করিম মোড়ল বলেন, অন্য ফসলের উন্নত মানের জাত ও বীজের গুনাগুণ, গুনাগত মান সম্পর্কে আমরা সহজে জানতে পারি কিন্তু গমের জাত ও বীজের গুনাগুণ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। তবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের মাঝে প্রশিক্ষণ প্রদান করে গমের চাষ পদ্ধতি ও উন্নত জাতের বীজ সম্পর্কে অবগত করলে ভালো হবে। তাহলে গমের চাষের উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, গত বছর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হলেও সেটা এবার নেমে এসেছে ৮১০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবার গম চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এর স্থলে বর্জন হয়েছে। জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় দিন দিন গমের চাষ ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, গম চাষের উপযোগী জমিতে উচ্চ মূল্যের সবজি চাষ হওয়ায় গম চাষ কমে যাচ্ছে। তাছাড়া এ বছরে গম চাষের উপর কৃষকের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা, কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হয়েছে।
দেশের খাদ্যনিরাপত্তা তালিকায় ধান আর আলুর মতো সোনালি গম উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে এমনি প্রত্যাশা এ দেশের মাটি ও মানুষের।