সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে এবার ব্যাপকহারে চাষ হয়েছে ভুট্টা। দামও হয়েছে আশানুরুপ। কিন্তু হঠাৎ করে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত খেত দেখে চাষীদের এখন মাথায় হাত। ধারদেনা করে কিংবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যারা স্বপ্ন বুণছিলেন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর তারাই এখন হতাশ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর সদর উপজেলায় ভুট্টা চাষ করা হয়েছে ৭২০ হেক্টর জমিতে। অনেকে ইতোমধ্যে কাটামাড়াই শুরু করেছেন। গতবার যে ভুট্টার দাম ছিল ৭০০ টাকা সেই ভুট্টার দাম উঠেছে এখন ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। অনেক আশা নিয়ে ফসল কর্তন করতে গিয়ে চাষীদের চক্ষু এখন চড়কগাছ। বেশিরভাগ ভৃট্টার মোচা অপরিপক্ষ অবস্থায় হেলে পরে বিনষ্ট হয়ে গেছে। শুধুমাত্র সদর উপজেলাতেই ক্ষতি হয়েছে ১০ হেক্টর ভুট্টা খেত।
এবার সদরের চর সারডোব এলাকায় দিগন্ত জুড়ে চাষ করা হয়েছে ভুট্টা। কিন্তু হঠাৎ করে ছত্রাক জাতীয় রোগে ভুট্টার মোচার গোড়ায় পচণ ধরায় সেটি অপরিপক্ক অবস্থায় মাটিতে পরে যাচ্ছে। বিভিন্নভাবে ঔষধ স্প্রে করেও মিলছে না প্রতিকার। ফলে অনেক কষ্ট করে যারা ভুট্টা লাগিয়েছেন তাদের মাথায় এখন বাজ পরেছে। এছাড়াও যারা ব্যাংক, এনজিও এবং ধারদেনা করে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন তারাই এখন ভুট্টার ফলন বিপর্যয়ে হতাশ এবং বিপর্যস্ত! কিভাবে ধারদেনা মেটাবেন এই দুশ্চিন্তায় কাটছে বিনিদ্র রাত।
চর সারডোব এলাকার ভুট্টা চাষী সামাদ জানান, আমি ২ লাখ টাকা খরচ করে ৪ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার দুই একর ভুট্টা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমার আসল নিয়ে টানাটানি পরে গেছে।
সন্নাসী গ্রামের ভুট্টা চাষী নজরুল হোসেন জানান, কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। পরে টাকা কম পরায় লাভের ওপর টাকা নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছি। ভেবেছিলাম ভুট্টা তুলে পরে টাকা পরিশোধ করব। এখন দেখি অর্ধেক জমির ভুট্টা শেষ। বাকীটা ঔষধ স্প্রে করে রক্ষা করেছি। এখন আমি মাঠে মারা গেলাম।
সামাদ ও নজরুল হোসেনের মত প্রায় একই অবস্থা হয়েছে এখানকার ভুট্টা চাষীদের। স্থানীয় কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে পরির্দশন করে জানিয়েছে নতুন জাতের ভুট্টা বীজ যারা ব্যবহার করেছেন তারাই বেশিরভাগ ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়েছেন। দেরীতে রোগ ধরা পরায় ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, হঠাৎ করে বøাস্ট রোগের কারণে প্রায় ১০ হেক্টর জমির ভুট্টা নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করে তাদেরকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মো. শামসুদ্দিন মিঞা জানান, আমাদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির কোন হিসাব নাই। তবে বৃষ্টিতে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ১ হেক্টর ভুট্টা নিমজ্জিত হয়েছে বলে তিনি জানান।