উজ্জ্বল হোসেন, যশোর ব্যুরো প্রধানঃ
গোখাদ্যে রঙ মিশিয়ে মরিচ-হলুদ গুড়ো যশোরের নীলগঞ্জ শ্মশান পাড়ায় অবৈধ কারাখানা খুলে দিনের পর দিন মাছ ও গবাদি পশুর খাবার মিশিয়ে ভেজাল হলুদ ও মরিচ গুড়ো তৈরি করে বাজারজাত করা চক্রে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। অভিজানিক টিম হাতে নাতে ধরে ফেলে মাছ, গরু, হাঁস-মুরগির খাবারে কৃত্রিম রঙ মিশিয়ে হলুদ ও মরিচের গুড়ো তৈরি হচ্ছে। যা আদৌ মানুষের খাবার যোগ্য নয়।
এসময় ভেজাল কারখানা পরিচালনাকারীদের দুইজনকে আটকের আওতায় আনা হয়। এমনকি তাৎক্ষনিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। উদ্ধার করা ২শ’ কেজি মৎস্য খাদ্য ও ৫ কেজি রঙসহ আনুসাংগিক সামগ্রি ধ্বংস করেন ম্যাজিস্ট্রেট।
নীলগঞ্জ মহা শ্মশান এলাকা অনেকটাই নিরব ও শুনশান। সেখানে একটি বাড়িতে হঠাৎ হঠাৎ করে চলে মেশিন। দিন রাত হয় শব্দ। হঠাৎ একটি কারখানার আবির্ভাব সেখানে। যশোরের বেজপাড়ার চাঁদপদ বিশ্বাসের ছেলে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও তার সহযোগী বারান্দি মোল্লাপাড়ার শীতল অধিকারীসহ কয়েকজন ডেরা খুলে চালাচ্ছিল ভেজাল হলুদ মরিচ গুড়োর কারখানা। কিন্তু ভেজালের বিষয়টি বেশ চমকপ্রদ। ওই ভেজাল কারখানায় মাছ, গরু, হাঁস-মুরগির খাবারে কৃত্রিম খাওয়ার অনুপযুক্ত রঙ মিশিয়ে হলুদ গুড়ো ও মরিচের গুড়ো তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিলেন। এই তথ্যে কয়েকদিন নজরদারির পর ৮ মে বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত র্যাব যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক এম নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চলে অভিযান। একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে রঙ ও কেমিক্যাল মিশিয়ে হলুদ মরিচ গুড়ো তৈরি চক্র।
মাছের খাদ্যে রঙ মিশিয়ে ভেজাল হলুদ ও মরিচ গুড়ো তৈরির সময় ওই ভেজাল কারখানা থেকে ২০০ কেজি মাছের খাদ্য ও ৫ কেজি রঙ জব্দ করা হয়।
ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে কারখানা সংশ্লিষ্ট রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও তার সহযোগী দিলীপ অধিকারী আটক হয়। এসময় তারা অভিযানিক টিমের সামনে সব স্বীকার করে। তারা কিভাবে গো খাদ্য ও মাছের খাবারে রঙ মিশিয়ে ভেজাল হলুদ ও মরিচ গুড়ো তৈরি করে তা দেখিয়ে দেয় মেশিন চালিয়ে। এসময় মোবাইল কোর্টের শরণাপন্ন হয় র্যাব। আহবান করা হয় ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মিকাইল হোসেনকে। তার নেতৃত্বে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (৫৯) ও দিলীপ অধিকারীর (৫৮) মরিচের গুঁড়া ও হলুদের গুঁড়া মিলে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ব্যাপারে র্যাব যশোরের অধিনায়ক এম নাজিউর রহমান জাতীয় দৈনিক আলোচিত কণ্ঠ কে জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ও তার লোকজন দীর্ঘদিন মাছের খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যাদি মিশিয়ে ভেজাল হলুদ ও মরিচের গুঁড়া তৈরি করেছিলেন। যন্ত্রপাতি ও আরো কিছু সরঞ্জাম এবং ভেজাল সামগ্রী মজুত করে কারখানা খুলে বসেছিলেন। গোপন তথ্যে খোঁজখবর নিয়ে হাতেনাতে তাদেরকে ধরা হয়। সাক্ষী প্রমাণ ও ভেজাল প্রসাধনীসহ রবীন্দ্রনাথ চক্রকে আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদেরকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মাছ, গরু, হাঁস-মুরগির খাবারে কৃত্রিম রঙ মিশিয়ে হলুদ গুঁড়া ও মরিচের গুঁড়া তৈরি করার সব বিষয় তারা স্বীকার করেছে। প্রাকটিক্যালে দেখিয়ে দিয়েছে তাদের ভেজাল প্রক্রিয়া। যার ভিডিও চিত্র মিডিয়াতে সরবরাহ করা হয়েছে। জরিমানার পরও যদি ওই মিলে এ ধরনের ভেজাল খাদ্য তৈরি করে তাহলে মিল বন্ধ করে দেয়া হবে বলে তিনি জানান। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারিতেও রয়েছে।