মুসা মিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ
বোর ধান কাটার ভরা মৌসুমেও হাসি নেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকদের মুখে। বৈরী আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকটের হতাশায় দিন পার করছে ধানচাষিরা। ধানকাটার ভরা মৌসুমে একদিকে শ্রমিক সংকট অপরদিকে বৃষ্টি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এঅঞ্চলে। জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল নাচোল উপজেলা সহ বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখাগেছে অধিক অংশ জমির ধান পেকে গেছে। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে প্রায়সব জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়ছে। এতে ধানের ফলনে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন কৃষকরা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এবং আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কীটনাশক, বালাইনাশক প্রয়োগের কারণে এবছর ধান চাষে বাড়তি খরচ হয়েছে বলে জানায় চাষিরা।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানাযায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবছ ৫১ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে বোর ধান চাষ হয়েছে। চাল উৎপাদন লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লক্ষ ২০ হাজার ৪শত মেট্রিকটন। জেলায় এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষিবিভাগ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর ও নাচোল উপজেলা ঘুরে দেখাগেছে হাজার হাজার একর জমির পাকা ধান বতাসে নুয়ে পড়েছে। বৃষ্টি আর শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের কৃষক মনিরুল ইমলাম জানান ঈদে পর থেকে প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন সময় বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ধানক্ষেতে পানি জমে আছে। ঈদ আগে বাতাস হওয়ায় আধা পকা অবস্থা মাটিতে নুয়ে পাছড়েছিল ধান। এখন পর্যন্ত শ্রমিক সংকটের কারণে কটাতে পারিনি। বরেন্দ্র অঞ্চল নাচোল উপজেলার অধিক অংশ কৃষকদের একইদাসা।
সদর উপজেলা শ্রীরামপুর গ্রামের ধানচাষি মোঃ ফয়জুল ইসলাম জানান এবছর ২৮ ও ৮১ জাতের ৭ বিঘা ধান আবাদ করেছি। বছরে এমনিতে আবহাওয়া অনুকুলে ছিলোনা। অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ও মাত্রা অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ধানে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই দেখাগেছে বেশি। এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ছিল ব্যাপক। রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশক, বালাইনাশক, প্রয়োগ করতে হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ হয়েছে। ধান শতভাগ পেকেগেছে তারপরও শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছি না। হয়তো নিজে নিজেই কাটব কিন্তু কয়েকদিন থেকে বৃষ্টির কারণে তাও পারছি না। বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবার। ধানের ফলনে উৎপাদন খরচ উঠাবে কিনা এই শঙ্কায় আছেন তিনি।
বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের আব্দুল মালেক, দুরুল ইসলাম, মোহরম আলীসহ একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানাযায় তারা বিপাকে পড়ে রয়েছে ধান নিয়ে। কৃষকরা জানায় এবার বিঘায় ১৫ থেকে ২০ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। এতে ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ উঠবে না অনেকের। একই অবস্থা ভোলাহাট, নাচোল ও শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবছর কৃষকরা একটু বিপাকে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলাম কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম । আলোকিত সকালকে জানান শিলাবৃষ্টি ও বাতাসের কারণে প্রায় সব ধান নুয়েছে এবং ধানকাটার ভরা মৌসুমে কয়েক দিন থেকে বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। জমিতে পানি জমে থাকা ও ধান নুয়ে যাওয়ার করণে এবছর কম্বাইন হারভেষ্টার দিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি কমে গেলে কিছুটা শ্রমিক সংকট কমবে বলে জানান। তিনি আরও বলেন কৃষকদের কম খরচে বেশি ফলন পাওয়ার জন্য উন্নত জাতের ধান চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।