আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার নেতারা এখন যেভাবে পালাচ্ছে, বিএনপির নেতারা আগেই সেভাবে আগেই পালিয়ে গেছে। তারেক রহমান ‘আমি আর রাজনীতি করবো না’ মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গেছেন।’
শনিবার ১৪ মে দুপুরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মন্ত্রী। গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য ‘শ্রীলঙ্কার চেয়েও আওয়ামী লীগের অবস্থা খারাপ হবে’ এর জের ধরে তিনি এ কথা বলেন।
‘যারা শ্রীলঙ্কার তুলনা বাংলাদেশে দেয়, তারা অনেক আগেই শ্রীলঙ্কার মতো পালিয়েছেন, কেননা আজকের শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতিতে তারাও পড়েছিলেন, তাই তারা এসব কথা বলছেন’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারেক জিয়া আর রাজনীতি করবে না বলে বাংলাদেশে মুচলেকা দিয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখনও রাজনীতি করছে। তাদের যদি লজ্জা থাকে। তাহলে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে।’
অতীত টেনে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তাদের নেতা মাহবুবুর রহমানকে তাদের দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ ধাওয়া করেছিল। ৮০ সালে জিয়াউর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তখন তাকেও ধাওয়া করেছিল। এখন নিজেরা কিভাবে পালাবেন সেটির পথ খুঁজুন।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সরকার যখন পদ্মা সেতু করছিল, তখন বিএনপি দেশে গুজব ছড়িয়ে ছিলো যে পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে। তাদের গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, এতে অনেক নিরীহ মানুষ মারা যায়। এখন বিএনপির মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ তাদের নেতারা পদ্মা নদীর ওপারে কীভাবে যাবেন- তা দেখার অপেক্ষায় আছি। তারা কি গাড়িতে চড়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাবেন, নাকি আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে ওপারে যাবেন- সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি।’
এসময় তৃণমূল প্রতিনিধিদের প্রশংসা করেন ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, তৃণমূল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাণ। জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের নেতারাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে নানা সমস্যা নানা প্রতিকূলতা অতিক্রমকালে অনেক নেতা দ্বিধান্বিত ও বিচলিত হয়েছে, অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছে, মূল নেতৃত্বের সাথে বেঈমানী করেছে। কিন্তু তৃণমূল কখনো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে বেঈমানী করে নাই।’
প্রায় সাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের অনেকের আলস্য ও সুবিধাবাদীদের অনুপ্রবেশের বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সভায় কোনো নেতা এলে বিপুল স্লোগান আর সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা হয় এবং ফেসবুকে শুধু সেই ছবি দেয়া ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য কাজ করতে আমি দেখিনা। দেশে প্রায় ৭ কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। কিন্তু সেই প্লাটফর্মে যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরূপ সমালোচনা হয়, তার প্রতিবাদে আমাদের নেতা-কর্মীদের যেভাবে সরব হওয়া দরকার সেটি দেখিনা। ১৩ বছর আগে দেশের অবস্থা কি ছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কারণে কি হয়েছে, সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে, বলে তথ্যমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ প্রধান বক্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্ম সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সংসদের চীপ হুইপ আবু সাঈদ মাহমুদ স্বপন ও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ওয়াসিকা আয়েশা খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।