মোঃ কামাল হোসেন খাঁন মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মেহেরপুরের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে গ্রীষ্ম মৌসুমের বেশ জনপ্রিয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন রসালো জাতীয় ফল কাঁঠাল। গ্রীষ্মকাল মানেই হচ্ছে নানা ফলের সমাহার। সুস্বাদু সব ফলের দেখা মেলে এই সময়েই। গরমের ফলের মধ্যে কাঁঠাল একটি পরিচিত নাম। কাঁঠাল গুণের রাজা এবং বাংলাদেশের জাতীয় ফল। পাকা কাঁঠালের সুঘ্রান আর স্বাদের কথা অনেকেরই জানা।
বিশেষজ্ঞদের মতে কাঁঠাল স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে পুরো পাকা পোক্ত কাঁঠাল হওয়ার সময় এখনও বাকি রয়েছে আরো এক মাস। প্রবাদ আছে গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। জৈষ্ঠ মাসে একথাটি আর কথার কথা থাকে না। গাছে কাঁঠাল দেখলে একথা সবাই বলতেই থাকে।
মেহেরপুর জেলার সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার প্রতিটি এলাকায় গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে রসালো ফল কাঁঠাল।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের বাগান রয়েছে। তবে বাড়ির পাশে, পুকুরের পাশে ও রাস্তার ধারেও রয়েছে অসংখ্য কাঁঠাল গাছ। যা কৃষি বিভাগের হিসাবের বাইরে।
তবে সব থেকে বেশি কাঁঠাল ধরেছে এমন গাছ নজরে পড়ে মেহেরপুর সদর উপজেলার সোনাপুর, কাঁঠালপোতা, নূরপুর, খোকসা, পুরাতন মদনাডাঙ্গা ও গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামে।
এছাড়াও কাজীপুর, সাহেবনগর, নওদাপাড়া, বেতবাড়ীয়া, ভবানীপুর, মটমুড়া, সহড়াতলা, মহাজনপুর, রতনপুর, শালিকা, ঝাউবাড়িয়া, কালিগাংনী, রাধাকান্ত পুর, মনোহরপুর, আশরাফপুর, কোলা, টুঙ্গী, টেংরামারি, খাসমহল, কাথুলী, নওপাড়া, মাইলমারী, ধানখোলা, রায়পুর, বানিয়াপুকুর, হেমায়েতপুর ও চরগোয়াল গ্রামসহ প্রতিটি এলাকায় বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে জঙ্গলের ভেতরে থাকা গাছে ধরেছে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল। গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল।
গাংনী উপজেলা শহরের ডক্টর’স পয়েন্ট কনসালটেশন সেন্টারের ডাঃ সজীব উদ্দীন স্বাধীন জানান, কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এতে থাকা কপার এবং ম্যাগনেশিয়াম খনিজ দু’টি শরীরে রক্ত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাঁঠালে থাকা ফাইবার প্রোটিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে ফলটি খেতে মিষ্টি হলেও ডায়াবেটিস বাড়ায় না।
শহরের রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক পুষ্টিবিদ তরিকুল ইসলাম জানান, কাঁঠালে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে সেইসঙ্গে হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ডিয়েটারি ফাইবার থাকে। এটি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। কাঁঠালে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁঠাল ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস ফলে এটি হাড়ের সুরক্ষা করে। এই ফল নিয়মিত খেলে পাইলস ও কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে। এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কাঁঠাল ত্বকের বয়স জনিত বলিরেখা দূর করে। এতে থাকা পর্যাপ্ত পানি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হওয়ায় কাঁঠাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মেহেরপুর সবজি খ্যাত হলেও এখানকার মানুষের অতি প্রিয় ফল ও তরকারি হিসেবে কাঁঠাল যুগ যুগ ধরে কদর পেয়ে আসছে। কাঠালের বিচি এখানকার মানুষের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ তরকারি। বিশেষ করে কাঁঠালের বিচি দিয়ে পটল এবং সঙ্গে ছোট মাছ দিয়ে অথবা বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে তরকারি রান্না করা হয়। হাঁসের ডিম ও মুরগির গোশত দিয়েও কাঁঠালের বিচির সমন্বয়ে রান্না করা তরকারি এখানকার মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে ভাত খেতে পারেন।
তাছাড়া গবাদিপশুর জন্য কাঁঠালের ছাল উন্নত মানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরীর জন্য সমাদৃত। কাঁঠাল গাছের পাতা বিভিন্ন প্রাণীর পছন্দের খাদ্য। তুলনামূলকভাবে বিশাল আকার এই ফলের বহির্ভাগ পুরু এবং কান্টকাকীর্ন, অন্যদিকে অন্তর্ভাগে একটি কান্ড ঘিরে থাকে অসংখ্য রসালো কোয়া। কাঁঠালের বৃহদাকার বীজ কোয়ার অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত।
গাংনী উপজেলার মাইলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, কাঁঠাল আমার একটি প্রিয় ফল। এটি অত্যাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। কাঁঠালের কোন অংশই পরিত্যক্ত থাকেনা। কাঁঠাল যেমন জনপ্রিয়, কাঁঠালের বিচিও খুব জনপ্রিয় খাবার। বিভিন্ন সবজির সাথে কাঁঠালের বিচি মিশিয়ে ছোট মাছ দিয়ে রান্না করা তরকারি, শুটকি মাছের সাথে কাঁঠালের বিচি আর ডাটা তরকারি লোভনীয়। এছাড়াও কাঁঠালের বিচি ভর্তা এরকম অসাধারণ সব স্বাদের খাবার তৈরিতে কাঁঠালের বিচি আলুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাঁঠালের কদরও বহুগুণের এমন কথা জানালেন কাঁঠাল প্রেমী প্রবীণ ব্যক্তিরাও।
বহুগুণ সমৃদ্ধ এ কাঁঠাল মেহেরপুরের হাট বাজারে গত তিন সপ্তাহ থেকে উঠতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি কাঁঠাল তরকারির জন্য এখানকার হাট-বাজারে প্রথমে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হলেও এখন তা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ এবং আষাঢ় মাসের শুরু থেকে মেহেরপুরের হাট-বাজারে পাকা কাঁঠাল বেচাকেনা শুরু হবে বলে স্থানীয় কাঁঠাল ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে।