মোঃ খলিলুর রহমান সাতক্ষীরা :
প্রায় ২ মাস যাবদ গো-খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার পশু খামারীরা। ভূষি, ক্যাটল বুস্টার, গম ইত্যাদির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গরুকে খাদ্যের চাহিদার তুলনায় কম খাওয়ানো হচ্ছে। এতে দুধ উৎপাদন ও পশুর মোটাতাজাকরনে ব্যপক প্রভাব পড়েছে।
খামারিরা বলছেন, কুরবানি ঈদে চাহিদার তুলনায় মাংস উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জেলার কৃষকরা গবাদি পশুসহ বহু মানুষ হাস-মুরগি, কবুতর, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন পশু-পাখি পালন করে থাকেন। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারাও পশু পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মানুষের খাওয়ার চালের চেয়েও খুচরামূল্যের গো-খাদ্য দাম বেশি। বাজারে ১ কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অপরদিকে ১ কেজি গো-খাদ্য গমের ভূষি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
খাদ্য ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দেড়-দুই মাস আগে ৩৭ কেজি ভূষির প্রতি বস্তা ১২/১৩ শত টাকা মূল্য ছিল, এখন সেটি ১৮শ থেকে দুই হাজার টাকা হয়েছে। ৩৭ কেজির কেটল বুস্টার প্রতি বস্তার মূল্য ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা, এখন সেটি ১২শ ৫০টাকা বস্তা।৩৪ কেজি গমের বস্তা ছিল ১১শ টাকা বর্তমানে হয়েছে ১৪শ টাকা। লবন প্রতি ৫০ কেজির বস্তা আগে ছিল ৫৫০ টাকা, এখন হয়েছে ৭৫০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগি খাদ্য নারিশ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ছিল ২৪শ ৭৭টাকা বর্তমানে হয়েছে ২৯শ ৭৭ টাকা। হাঁসের জন্য লিয়ার প্রতি ৫০ কেজির বস্তা আগে ছিল ২২শ ৬২ টাকা বর্তমানে হয়েছে ২৪শ ৮৭ টাকা।
সাতক্ষীরা শহরের পশুর খুচরা খাদ্য বিক্রেতা আনন্দ সানা জানান, খাদ্যের শঙ্কট নেই। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। এখন আগের তুলনায় খাদ্য কম বিক্রি হচ্ছে।
মিল মালিক আবু হেন জানান, দেশে গম উৎপাদন কম হয়। কয়েক মাস যাবত বিদেশ থেকেও গম আমদানি কম হচ্ছে। তাই বয়লার কুড়া (ভূষি) ও বুস্টার উৎপাদন কম হওয়ায় ভূষিসহ অন্যান্য খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
খামার মালিক সৈয়দ আলমগীর হোসেন বলেন, আমার খামারে গাভী ও ষাড় মিলিয়ে ১৮টি গরু রয়েছে। মাস দুয়েক ধরে খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি। খামার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আগে যেখানে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার খরচ হতো সেখানে এখন ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
খামারী ব্যবসায়ী মো:রিপন হোসেন বলেন, গো-খাদ্যের মূল্য বর্তমানে এতটাই চড়া যে এগুলো ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আমার খামারে ১০টি গাভি ও ৪টি ষাড় আছে। প্রতিদিন গড়ে এক বস্তা করে গমের ভূষি ও বুটের খোসা ও অন্যান্য খাদ্য লাগে। কিন্তু হঠাৎ করে ভূষি ও বুটের খোসার দাম বাড়ায় খুব অসুবিধায় পড়েছি। খাদ্য দাম বাড়ায় গাভীকে কম খাওয়াতে হচ্ছে ফলে দুধ কম পাচ্ছি। এখন দুধ বিক্রি করে পোষাচ্ছে না।
এদিকে হঠাৎ খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে যে লাভের আশায় করছেন খামারীরা তাতে প্রচুর লোকসান গুণতে হবে। দ্রুত খাদ্যের দাম না কমলে বড় ধরনের লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে-হয় এখনই গরু বিক্রি করতে হবে, নয়তো খামার বন্ধ করে দিতে হবে।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আঃ রউঠ বলেন, বাজারে গো-খাদ্যের দাম একটু বেশি। প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। তাই গবাদি পশু পালনকারী ও খামারিদের দানাদার খাবারের উপর চাপ কমিয়ে ঘাস উৎপাদনের দিকে মনোযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি।