এস.এম.বিপু রায়হান,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বিশালাকৃতির তিনটি গরু। মালিকরা আদর করে গরুগুলোর নাম রেখেছেন- বাহুবলী, নবাব বাহাদুর ও সেকেন্দার।
জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসন্ন কোরবানির জন্য সিরাজগঞ্জে মোট ৩ লক্ষ ৯১ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাহুবলী, নবাব বাহাদুর ও সেকেন্দার সবচেয়ে বড় গরু।
শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের কৃষক কোরবান সরকার সেকেন্দারকে প্রস্তুত করেছেন। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রস’ জাতের একটি গরু লালন-পালন করেছি। নাম রেখেছি ‘সেকেন্দার’। গরুটির ওজন ৩০ মণ হবে। দাম হাঁকা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। গরুটিকে দেখতে প্রতিদিন মানুষ বাড়িতে ভিড় করছেন।’
কোরবান সরকার বলেন, ‘সেকেন্দারকে দেশীয় পদ্ধতিতে ছোলা, সবুজ ঘাস, খৈল, ভুসি, চিটাগুড়, গম, মসুর, কলাই, খেসারি, যব, ভুট্টাসহ কেমিক্যালমুক্ত খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে। এখন প্রতিদিন ৮০০ টাকার খাবার খাচ্ছে সেকেন্দোর। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গরুটির শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।’
উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্বদেলুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সখ করে বাড়িতে কিছু গরু পালন শুরু করি। এর মধ্যে একটি গরুর প্রতি মায়া বেড়ে যায়, তাই গত তিন বছর ধরে তাকে বিক্রি করিনি। এখন ওই গরুর ওজন ১২৫০ কেজিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এবার বিক্রি করব ভাবছি, কিন্তু এত বড় গরুর নাকি কোনো নাম না দিলে বিক্রি হয় না। এ কারণে মায়ার এই গরুটির নাম দিয়েছি বাহুবলী।’
আব্দুল আজিকের ছেলে মো. কাওসার আলী বলেন, ‘আব্বা ছোটবেলা থেকেই সখের বশে গরু লালন-পালন করেন। আমি ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে অনেক গুরু দেখে আসছি। সব গরুর মধ্যে এই গরুটা ব্যতিক্রম হওয়ায় আব্বা সব গরু বিক্রি করে দিয়ে শুধু এইটা রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাহুবলীর বর্তমান বয়স ৩ বছর। এই ৩ বছরে বাহুবলীর পেছনে আমাদের খরচ হয়েছে অন্তত ৫ লাখ টাকা। ১২৫০ কেজির এই গরুটির আমরা দাম চেয়েছি ১২ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ পর্যন্ত দাম হয়েছে কিন্তু বিক্রি করিনি।’
গরুর নাম বাহুবলী রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকেই বলল এত বড় গরুর ভালো নাম না রাখলে বিক্রি হবে না। এদিকে গরুটি বাহুবলীর মতোই শক্তিশালী, তাই এই নাম রাখা। এই বাহুবলী অন্যান্য গরুর মতোই স্বাভাবিক খাবার খেলেও গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় বাহুবলীকে এবার বিক্রি করতেই হবে।’
বহুবলীর মালিক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও বাহুবলীকে কখনো না খাইয়ে রাখিনি বা কষ্ট দেয়নি। এ ছাড়া এত বড় গরু হাটে নিয়ে বিক্রি করা সম্ভব নয়, তাই লোকমুখে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। বাহুবলীকে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে সংসারের কাজ করা হবে।’
নবাব বাহাদুরকে প্রস্তুত করেছেন তাড়াশ উপজেলার আসনবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল আহাদ। তিনি বলেন, ‘সংসারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি বাড়তি লাভের আশায় দুই বছর ধরে সিন্ধি জাতের ষাঁড়টি লালন-পালন করেছি। গরুটির বয়স ৩ বছর। ওজন প্রায় ১ হাজার ১০০ কেজি। দাম হাঁকা হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। ষাঁড়টি এরই মধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। নবাব বাহাদুর বর্তমানে উপজেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড়।’
ষাঁড়টির নাম নবাব বাহাদুর রাখার কারণ জানতে চাইলে আব্দুল আহাদ বলেন, ‘গরুটির আচরণ অনেকটা নবাবের মতো। খৈল-ভুসির পাশাপাশি আপেল, কমলা, কলা খেতে সে পছন্দ করে। তা ছাড়া পরিষ্কার জায়গা ছাড়া থাকতে বিরক্ত বোধ করে। ফ্যানের বাতাস ছাড়া ঘুমায় না। এসব কারণে তার নাম নবাব বাহাদুর রাখা হয়েছে।’
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, ‘জেলায় কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে প্রায় চার লাখ। চাহিদা রয়েছে আড়াই লাখ। চাহিদার অতিরিক্ত পশুগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠানো হবে।’