সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রামঃ দুই দিন পর পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফ এর ধাওয়ায় নদীতে ডুবে মৃত দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধারের দুই দিন পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাশীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তে আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এস এর পাশে বিএসএফ-বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। লালমনিহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার ফরিদ উদ্দিন শিশু দুইটির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রহিজ উদ্দিনের মামা সাইফুর জানান, রাতেই শিশু দুইটির লাশ দাফন করা হবে। রবিবার দুপুর দেড়টায় ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৪৩ এর মাত্র ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে নীলকমল নদীতে শিশু দুইটির ভাসমান লাশ উদ্ধার করে ১৯২ ব্যাটালিয়ন সেওটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ।
এর আগে ১ জুলাই শুক্রবার রাতে ভারতীয় কয়েকজন দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারত থেকে নীলকমল নদী সাতরিয়ে বাবা-মার সাথে বাংলাদেশে ফেরার সময় স্রোতের টানে মা ছামিনা বেগম (৩০) এর হাত ফসকে হারিয়ে যায় শিশু পারভীনা খাতুন (৮) ও শাকিবুল হাসান (৪)। তাদের বাবা রহিজ উদ্দিন (৩৫) এর বাড়ী নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের মধ্য সুখাতী গ্রাম। নিহত শিশুর চাচা নেওয়াশী ইউনিয়ন ওয়ার্ড সদস্য আজিজুল জানান, তার ভাই রহিজ উদ্দিন ১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে যান। কাজ করেন একটি ইটভাটায়। সেদেশেই ওই দুই শিশুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
রহিজ উদ্দিন জানান, সর্বশেষ হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুরের হাসিহেসা ইট ভাটায় কাজ শেষে তারা গত শুক্রবার বাড়ী ফিরছিলেন। তাদের কাছে বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকায় নিরবিঘ্নে দেশে ফিরতে তারা দালালদের সাথে ২২ হাজার রুপী চুক্তি করেন। কিন্তু দালালরা তাদের কাছে ৪০ হাজার রুপী নেন। গত শুক্রবার রাতে ভারতীয় দালাল সিরাজুল ইসলাম, নয়ন, ময়না মিয়াসহ আরও কয়েকজন তাদেরকে কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার সেউটি-১ সীমান্তে এনে অন্য আরও ২০/২৫ জন নারী,পুরুষ ও শিশুর সাথে একটি বাড়ীতে রাখে।
রাত সাড়ে ৯ টায় পাচারকারী দালালরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাদেরকে নীলকমল নদীর পাড়ে এনে নোম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রাখে। নদী সাতরিয়ে দেশে ফিরতে বলেন তাদের। এ সময় তাদের কথাবার্তার শব্দ শুনে ভারতীয় সেউটি-১ ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে দুই সন্তনকে নিয়ে নদীতে লাফিয়ে পড়েন তারা। ভয়ে অন্ধকারে তীব্র স্রোতের টানে ঠিকমত সাতরাতে পারছিলেন না। ভেসে যাচ্ছিলেন ভাটিতে। একসময় স্ত্রী ছামিনার হাত ফসকে স্রোতের টানে পানিতে ডুবে যায় তাদের নাড়ি ছেড়া ধন। সে সময় অনেক খুজেও তাদের উদ্ধার করতে পারেননি তারা।
রবিবার নদীতে ভেসে উঠে মরদেহ। নদীতে শিশু দুইটির ভাসমান লাশ উদ্ধার করে ১৯২ ব্যাটালিয়ন সেওটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ। এদিন শিশু দুইটির পক্ষে বাংলাদেশী কোন প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় তারা মরদেহ দুইটি নিয়ে যায়। পরে ওইদিন মৃত সন্তানের লাশ ফেরৎ চেয়ে লালমনিহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার বরাবর একটি মানবিক আবেদন করেন বাবা রহিজ উদ্দিন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ফুলবাড়ী উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তে আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এস থেকে ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে জনৈক নারায়ণ চন্দ্র বর্মনের বাড়ীর উঠোনে বিএসএফ-বিজিবি বৈঠক শেষে শিশু দুইটির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।