এস এম সোহেল,গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃমুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাকে ’শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা’ ঘোষণার অপেক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২১ জুলাই সকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হলরুমে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকাল ৪টায় উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে গোবিন্দগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন প্রিণ্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়াকর্মীদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) মো. শরিফুল ইসলাম তাজু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন, দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান আ.র.ম শরিফুল ইসলাম, কাটাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু জোয়াবের গোলাপ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা শ্যামলেন্দু মোহন রায় জীবু বাবু ও সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুজিববর্ষ উপলক্ষে সেমি-পাকা একক গৃহের বিবরণ দেন। সেই সাথে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি জানান, গোবিন্দগঞ্জে প্রথম পর্যায়ে ১২০, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৫০ ও তৃতীয় পর্যায়ে ৩৮০টি সহ মোট ৮৫০টি সেমি-পাকা একক গৃহ নির্মাণ প্রায় সমাপ্তের পথে। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ১৪টি ইউনিয়নের ২৬টি স্থানে এসব গৃহ নির্মাণ করা হয়।
এদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে কামদিয়া মরাবস্তায় ৫০ এবং সাপমারার দুধিয়ায় ৭০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৫০টি গৃহের মধ্যে কামদিয়ার মোলামগাড়ী, জোরপুকুর, বোইল গ্রাম, ষাট পুকুরে একত্রে ১২০টি, শাখাহারের শিহিগাঁও এ ১৬টি, রাজাহারের মদিয়াপুকুর, সুখু-দুখুতে একত্রে ৮৭টি এবং দরবস্তের নলডাঙ্গায় ১২০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ৩৮০টি ঘরের মধ্যে কামদিয়ার বস্তাহার বইলগ্রামে ৫৪টি, কাটাবাড়ীর সাত নম্বর-নাছিরাবাদ-মালেকাবাদ-কাটাবাড়ীতে একত্রে ২১৫টি, দরবস্ত ইউপির নলডাঙ্গায় ১৯টি, নাকাই ইউপির খুকশিয়ায় ৬টি, হরিরামপুর ইউপির রামচন্দ্রপুরে ২টি, ফুলবাড়ি ইউপিতে ১টি, গুমানীগঞ্জ ইউপির কুড়িপাইকায় ৭টি, কামারদহ ইউপির ঘোড়ামারা-কন্দর্পপুরে ৩৮টি, কোচাশহর ইউপিতে ১টি, মহিমাগঞ্জ ইউপির পান্থামারীতে ২৯টি ও শালমারা ইউপিতে ৪টি গৃহ নির্মাণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও জানান, ’ক’ শ্রেণিভুক্ত (যারা ভূমি হীন ও অন্যের জমিতে বসবাস করেন তারা সরকারের খাস জমিতে বসবাসের ইচ্ছাপোষণ করে) এবং ‘খ’ শ্রেণিভুক্তদের (যাদের ভূমি আছে ঘর নাই) মাঝে উল্লেখিত ৮৫০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে। ইতিমধ্যে তালিকাভুক্তদের নামে দুই শতাংশ জমি ও গৃহের কবুলিয়াত দলিল সম্পাদন সম্পন্নের পথে। প্রকল্পে বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নে বিআরডিবি’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান ও যে সকল প্রকল্পে পুকুর রয়েছে সেখানে মৎস্যজীবী সমিতি গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পে বসবাসকারীদের ফ্রি বিদ্যুৎ সংযোগ, বিশুদ্ধ পানীয় ও শতভাগ স্যানিটেশনের সুবিধা প্রদান করা হবে। এছাড়াও এলজিইডির মাধ্যমে যোগাযোগের রাস্তাগুলোর উন্নয়ন চলমান থাকবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
প্রসঙ্গত, আগামী ২১ জুলাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে একযোগে ২৬ হাজার ২২৯ জন গৃহহীন মানুষের মাঝে উপহার হিসেবে পাকাঘর প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। এদিন সকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান গোবিন্দগঞ্জকে শতভাগ গৃহ ও ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। গাইবান্ধা জেলার ৭ টি উপজেলায় ১৫৯৭ জন উপকারভোগীর মাঝে ঘর ও যাবতীয় কাগজপত্র (দলিল, মিউটেশন ইত্যাদি) হস্তান্তর কার্যক্রম একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। জেলা প্রশাসন গাইবান্ধার তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রমকে সর্বসাধারণের মাঝে তুলে ধরার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ মানবিক উদ্যোগকে সফল ও সার্থক করতে গাইবান্ধা জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে অনুরূপ একটি প্রেস ব্রিফিং জেলা প্রশাসক এর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।