সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রামঃ কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে কথিত এক কবিরাজকে এলাকার মানুষ “বান মারার কাজে ব্যবহৃত মৃত মানুষের মাথার খুলি ও হাড্ডি”সহ আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে । ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেওয়ানেরখামার গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, দেওয়ানের খামার গ্রামের আয়নাল হক সর্দারের বাড়ির গেটে প্রায় প্রায় কে বা কারা গভীর রাতে মরা মানুষের কাফনের কাপড়,সিদুর মাখা জবা ফুল,সিদুরের ফোটা দেয়া বস্তুু রেখে যেত। এমন ঘটনার কিছুদিন পর থেকে আয়নাল হক সর্দারের স্ত্রী মোছাঃ জুলেখা বেগম মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হলে তাকে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নিলেও তার কোন সুস্থতা পরিলক্ষিত হয়না। এ অবস্থায় আয়নাল হক তার এক বন্ধুর পরামর্শে অন্য একজন কবিরাজ এর শরণাপন্ন হন স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য । শুরু হয় ঝাড়ফুঁক আর কবিরাজি চিকিৎসা, কিছুদিনের চিকিৎসায় গৃহবধূ ধীরে ধীরে সুস্থতা অনুভব করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি কবিরাজি চিকিৎসা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এসময় তাকে ওই কবিরাজ বলেন, তার স্ত্রীর উপর বড় ধরনের কোন কাজ করেছে যেটা কাটতে পারবে সময় লাগলো।
এরপরই গৃহকর্তা আয়নাল হক সর্দার বান নিক্ষেপকারী সন্দেহভাজন ওই কবিরাজের উপর নজরদারি শুরু করেন। গত (২২জুলাই) শুক্রবার আয়নাল হক সর্দারের প্রতিবেশী জনৈক লিটন মিয়ার বাড়িতে কথিত কবিরাজ আব্দুস ছাত্তার (৫০) আসেন এবং বিভিন্ন তন্ত্র মন্ত্রের সাহায্যে সেখানে কবিরাজী শুরু করেন। খবর পেয়ে আয়নাল হক সর্দার সেখানে উপস্থিত হন এবং তার স্ত্রীর চিকিৎসা করাবেন বলে কবিরাজকে প্রস্তাব দেন কিন্তু কথিত কবিরাজ কৌশলে তার স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে পারবেন না বলে ছাপ জবাব দেন। তার কথাবার্তা শুনে আয়নাল হকের সন্দেহ হয়। এরপর আয়নাল হক সর্দার বাড়িতে চলে যান। কিছুক্ষণ পর কথিত কবিরাজ লিটনের বাড়িতে কবিরাজি কাজ শেষ করে ফেরার সময় উক্ত আয়নাল হক সর্দার ও এলাকাবাসী তাকে রাস্তায় আটক করে।
এসময় তার সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে একটি মরা মানুষের মাথার খুলি,হাড্ডি ও বান মারার কাজে ব্যবহৃত কবিরাজী জিনিসপত্র উদ্ধার করে এলাকাবাসী। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজন ভুরুঙ্গামারী থানা পুলিশকে জানালে, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে একটি মরা মানুষের মাথার খুলি,হাড্ডি ও বান মারার কাজে ব্যবহৃত কবিরাজী জিনিসপত্র সিজার লিস্ট ভুক্ত করেন। এরপর কথিত কবিরাজ আব্দুস ছাত্তারকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়। কথিত ওই কবিরাজ উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তরছাটগোপালপুর গ্রামের মৃত রফাতুল্লাহর পুত্র বলে পুলিশ জানায়। আয়নাল হক সর্দার সাংবাদিকদের জানান, তার শত্রুদের দাঁড়া প্রভাবিত হয়ে টাকার বিনিময় কথিত এই ছাত্তার কবিরাজই তার স্ত্রীর উপর বান মেরে ছিল।পরবর্তীতে তিনি অন্য কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা করে স্ত্রীকে সুস্থ করেছেন।
ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাঃ আলমগীর হোসেন -কবিরাজ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাকে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে আসার পর পুলিশ বাদী হয়ে দঃবিধি ১৫১ ধারায় মামলা দায়ের করে আজ শনিবার সকালে অভিযুক্ত কবিরাজকে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে।