অপরাধ সারাদেশে

ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির ফাঁদে পঞ্চগড়ের তরুণরা: বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা

ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির ফাঁদে পঞ্চগড়ের তরুণরা: বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা বদরুদ্দোজা প্রধান পঞ্চগড় প্রতিনিধি বুকভরা স্বপ্ন আর চোখে রঙিন আভা নিয়ে ঘর ছেড়েছিল পঞ্চগড়ের একদল তরুণ। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আজ চূর্ণবিচূর্ণ, কারণ ‘ইকরা ট্রাভেল’ নামের এক ভুয়া এজেন্সির পাতা ফাঁদে পড়ে তারা হারিয়েছে জীবনের সব সঞ্চয়, ৩৪ লক্ষ টাকার বেশি খুইয়ে আজ তারা দিশেহারা। কেউ এখন নদীর বালুতে খুঁজে ফিরছে জীবিকা, কেউবা দেনার দায়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে, আর কেউবা সমাজের চোখে মুখ দেখাতে পারছে না লজ্জায়। রাজধানী ঢাকা থেকে পরিচালিত এই ধূর্ত চক্রটি ফেসবুকের রঙিন বিজ্ঞাপনে লোভনীয় প্রস্তাব দিতো মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের উন্নত দেশে চাকরির, স্থায়ী বসবাসের। পঞ্চগড়ের সরলপ্রাণ তরুণরা সেই মোহে আছড়ে পড়লো প্রতারণার অতল গহ্বরে। তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো জাল ভিসা, নকল বিমানের টিকিট। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে যখন তাদের পথ রুদ্ধ হলো, তখনই তারা বুঝলো, তাদের স্বপ্নের ভেলা ডুবেছে এক নিষ্ঠুর প্রতারকের জালে। সদর উপজেলার জগদল সতরংপাড়ার রিফাত হাসান, সবে এসএসসি পাস করেছে। ইতালির স্বপ্ন দেখেছিল সে। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবা-মায়ের শেষ সম্বল, গরু, বাছুর, জমি সব বিক্রি করে তিন দফায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিল ইমরান মাহমুদের হাতে। আজ রিফাতের সব স্বপ্ন ছাই। এখন সে নদীতে বালু টেনে প্রতিদিন মাত্র চার-পাঁচশ টাকা রোজগার করে, যা দিয়ে কোনোমতে চলে তার পরিবার। রিফাতের বাবা বলেন, ছেলের ভবিষ্যতের জন্য গরু-বাছুর, জমি সব বিক্রি করেছি। আজ সে নদীতে বালু টানে, আমাদের মুখ দেখানোর উপায় নেই। রিফাতের মতো একই পরিণতি হয়েছে হোসাইন, হাবিবুর, সুমন এবং লিমন-সহ আরও অনেকের। ইতালি ও দুবাই পাঠানোর লোভ দেখিয়ে এই পাঁচজনের কাছ থেকেই হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা। কত আশা নিয়ে কেউ কেউ বাড়িতে মিলাদ দিয়ে বিদায় নিয়েছিল বিদেশযাত্রার জন্য! কিন্তু শেষমেশ বিমানবন্দর থেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হলো তাদের। সুমনের বাবা আফসোস করে বলেন, বড় আশা নিয়ে ছেলেকে বিদায় দিয়েছিলাম। এখন সে প্রতারিত হয়ে ফিরেছে, আর আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারি না। প্রতারক ইমরান মাহমুদকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে,তবে ভুক্তভোগীরা এখনো তাদের খোয়ানো টাকা ফেরত পাননি। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা চলমান। মামলার পর মামলা করেও যখন কোনো সুরাহা মেলেনি, তখন অনেকেই আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন অসহায় দৃষ্টিতে। দেনাদারের চাপ আর সামাজিক অপমানে অনেকেই এখন নিজের বাড়িতেও থাকতে পারছেন না। হোসাইনের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সবকিছু বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর চেষ্টা করেছিলাম। এখন আমরা পথে বসেছি। পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, প্রতারক ইমরান মাহমুদকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তে আরও বেরিয়ে এসেছে, ইমরান মাহমুদ বিভিন্ন নামে ও পরিচয়ে দেশের নানা স্থানে ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সি খুলে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। একাধিক স্ত্রী ও বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে সে চালাতো এই জালিয়াতির চক্র।

0 Shares

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *