রাম বসাক, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জঃসিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে উপজেলার বলদিপাড়া-হলদিঘর খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসন জায়গা নির্ধারণ করলে স্থানীয়রা এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছিলেন। এ নিয়ে তারা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
গতকাল রোববার (২১ আগস্ট) সকালে মাটি ভরাটের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে ওই মাঠে যাচ্ছিলেন শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান। পথে মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারীরা তাদের বাধা দেন। তারা গাছের গুঁড়ি পুতে এবং ও বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেন। ব্যারিকেড ভেঙে জোর করে মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে গ্রামবাসীর সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনের সংঘর্ষ হয়।
এসময় এলাকাবাসীর ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমানসহ (এসিল্যান্ড) ৬ জন আহত হন। এসময় ইউএনওর সরকারি গাড়িও ভাংচুর করা হয়।
এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাহজাদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সাতজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
তারা হলেন— উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামের আব্দুল মজিদের স্ত্রী সেলিনা খাতুন, আল মাহমুদের স্ত্রী ঝরনা খাতুন, হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী ওজুফা বেগম, মো. নজরুল ইসলামের স্ত্রী হুসনে আরা, মো. আনসার আলীর স্ত্রী মালেকা খাতুন, জামাল পরামানিকের স্ত্রী আকলিমা খাতুন ও আব্দুল আলীমের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন।
রোববার (২১ আগস্ট) রাতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের পেশকার আব্দুল হাই বাদী হয়ে ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও শতাধিক ব্যাক্তিকে বিবাদী করে মামলাটি দায়ের করেন ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) হাসিবুল ইসলাম ও শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আব্দুল মজিদ বলেন, রাতেই সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের পেশকার আব্দুল হাই বাদী হয়ে ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও এক শতাধিক ব্যাক্তিকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটির এজাহার নিয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) হাসিবুল ইসলাম বলেন, মামলাটি হওয়ার পরে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এ মামলায় অযথা কেউ হয়রানির শিকার হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার ভিডিও ও ছবি দেখে প্রকৃত অভিযুক্তদেরকেই আটক করা হবে। এছাড়াও তারা রাস্তার ওপরে গাছের গুড়ি পুতে ও বাঁশ দিয়ে যে ব্যারিকেড তৈরি করেছিল তা অপসারণ করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি সরকারের রেকর্ডকৃত পতিত জমি জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এর পাশেই একটি প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ আছে। কিন্তু যে জায়গাটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ সরকারি ও ১৯৮০ সালের সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী পতিত জমি।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. মাসুদ রানা বলেন, উপজেলা পর্যায়ে একটি করে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের জন্য নির্ধারিত জায়গা ছাড়া ক্রীড়া সংস্থার অন্য তেমন কোনো মাঠ নেই এটুকু বলা যায়। তবে সেটি সরকারি সম্পত্তি নাকি এলাকাবাসী বা কোনো প্রতিষ্ঠানের সেটা বলতে পারছি না। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের জন্য অন্য কোনো সরকারি জায়গা থাকলে খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ না করাই ভালো বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।