এস এম সোহেল,গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃঢাকা থেকে বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত সাসেক-২ মহাসড়ক প্রশস্তকরণের লক্ষে অধিগ্রহনকৃত জমির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভাস্থ বোয়ালিয়া মৌজায় জমির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্তরা সংশ্লিষ্ট সাসেক ও জেলা কর্মকর্তাদের দূরাভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন থেকে জমির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।
বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১২টায় গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বোয়ালিয়া মৌজার গাইবান্ধা মোড় নামক স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মানববন্ধন পালন করে। মানব বন্ধনে বক্তারা জেলার এল এ শাখায় বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্বজনপ্রীতি ও তাদের অবিবেচক সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে। এর আগে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ৮ ধারা নোটিশে উল্লেখিত তারিখে ক্ষতিপূরণ দাবির বিষয়ে সমঝোতা না করেই স্থাপনা উচ্ছেদের চেষ্টাকে দূরাভিসন্ধিমূলক আখ্যা দেয় মানববন্ধনে উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্তরা।
তারা জানান,গত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে সম্পন্ন হওয়া যৌথ তদন্তে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা, এল এ শাখার সার্ভেয়ার, কানুনগো ও সাসেক প্রতিনিধি সরেজমিনে জমির শ্রেণিতে দোকান/বাণিজ্যিক, বাড়ী, ডাঙ্গা, দলা, পুকুর, বাগান, রাস্তা ইত্যাদি উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে আবারও সরেজমিন পরিদর্শনের নামে পূর্বের যৌথ তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যোগসাজসী মতামত প্রদান করা হয়। এর ফলে প্রভাবশালী কয়েকজন লাভবান হলেও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। তারা যৌথ তদন্ত মোতাবেক জমির শ্রেণি মূল্য নির্ধারণের দাবি জানান। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী আনোয়ার, আব্দুল ওয়াদুদ, আজাদ আল মাসুদ, নিহাদ সুলাতানা ও মামুন প্রমুখ।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত নিহাদ সুলতানা জানান, বোয়ালিয়া মৌজার জে.এল নং- ২৪১, এস-এ খতিয়ান নং-৪৭৭, দাগ নং-২৬০৭, জমির পরিমাণ ২৭ শতকের মধ্যে ৪ দশমিক ৪০ শতক এল এ কেস নং ০৫/২০১৯-২০২০ মূলে অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে ৪ ধারা নোটিশ জারির সাত দিন পর যৌথ তদন্ত সম্পন্ন হয়। এসময় একই দাগে আমি, আমার বোন শাহিদা জিন্নাত আরা, ভাই আশরাফুলের সহ প্রায় ১৫ শতাংশ জমি বাণিজ্যিক শ্রেণিকরণ করা হয়। সেসময় ওই দাগে সেমি-পাকা দোকান ঘর চুক্তিনামা মূলে ভাড়া প্রদান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, বাণিজ্যিকহারে বিদ্যুৎ বিল প্রদান, তফশীল জমির খাজনা খারিজ বাণিজ্যিকহারে প্রদান, বাণিজ্যিক হোল্ডিং, ট্যাক্স ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নিকট মর্গেজ প্রদানের কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়। বিগত ২০১৬ সালের ১২ আগস্ট ব্যাংক সার্ভে এ জমির প্রতি ডেসিমেল মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ টাকা। এর পরেও সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং মনগড়া অসৎ উদ্দেশ্যে যৌথ তদন্তের পরে ভুয়া রিপোর্ট দাখিল করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আমরা এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে পুন: তদন্ত সাপেক্ষে নয়ত যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদের অবকাঠামো সহ জমির প্রকৃত মূল্য বাণিজ্যিক হারে প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিগত সময়ে ৪ ধারা নোটিশ জারির পরেও অনেকেই স্থাপনা নির্মাণ করে এল.এ শাখার যোগসাজসিতে বাণিজ্যিক শ্রেণিভুক্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় ২০১৪ সালে। আর এর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এ অংশে অধিগ্রহনকৃত জমির ৪ ধারা নোটিশ জারি করা হয় ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আর সবশেষ ২ আগস্ট ২০২২ তারিখে ৮ ধারার নোটিশ দেওয়া হয়। যেখানে জমির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ না করায় বিষয়টি অমিমাংসিত রয়েছে।