মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃসাতক্ষীরার ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের মেলা আগামী রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে। মনসা পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে প্রাচীন লোকজ সংস্কৃতি মেলা মেলা চলবে দুই সপ্তাহ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির জানান, বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য এ মেলা সাতক্ষীরার ৪০০ বছরের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ বছরও জাকজমকপূর্ণ পরিবেশে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগে মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে মেলার স্টল স্থাপন মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পর্যাপ্ত আনসার সদস্য নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোমনাথ ব্যানার্জি বলেন, তিনশ বছর আগে শুরু হওয়া ভাদ্র মাসের শেষ দিনের এই পূজা ও মেলা বসে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলে গুড় পুকুর পাড়ে প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে। শহরব্যাপী জমজমাট হয়ে থাকা এ মেলা ১৫ দিন থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে।
মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুর মেলা ২০২২ সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির সভায় সভাপতিত্ব করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক কাজী আরিফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) কনক কুমার, সাতক্ষীরা পৌরসভা প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান, সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কাইয়ুম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষ, জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি এড. সোম নাথ ব্যানার্জি, পৌর কাউন্সিলর নমিতা রাণী, রাবেয়া পারভীন, জেলা আওয়ামী লীগের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষ জানান, ২০১৯ সালে করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল এ মেলা। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে একটি সিনেমা হল ও সার্কাস প্যান্ডেলে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে তিন জন নিহত হন এবং আহত হয় শতাধিক। এরপর থেকে দীর্ঘ ৮ বছর এ মেলা বন্ধ ছিল। প্রতি বছর ৩১ ভাদ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্পদেবী মনসা পূজার মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকায় প্রাচীন আমলের গুড়পুকুরকে ঘিরে বসতো মেলা। একই দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করতেন বিশ্বকর্মা পূজা। মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা নিয়ে অংশ গ্রহণ করতো। প্রতিবেশী ভারতীয় দর্শনার্থীরা মেলা দেখতে ভিড় জমাতো।