মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী, রানীশংকৈল, হরিপুর, ঠাকুরগাঁও সদর, স্কুল-কলেজের প্রায় সব শিক্ষার্থীই এখন ক্লাস ছেড়ে কোচিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে যাদের আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে তারা সব সাবজেক্টেরই আলাদা কোচিং করছে। কোচিংয়ের সময়সূচির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই স্কুল-কলেজে যাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দিন দিন কমছে। এ নিয়ে শিক্ষাবিদরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধারা চলমান থাকলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা খুব শিগগিরই ভেঙে পড়বে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ ও পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও মেধার বিকাশের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। তাদের নৈতিকতা ও আচার-আচরণে ভয়াবহ নেতিবাচক পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলছেন, একজন শিক্ষার্থী নিজ প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি সাধারণ জীবনযাপনের সার্বিক শিক্ষায় উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠে। তারা ক্লাস ছেড়ে কোচিংনির্ভর হয়ে পড়লে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে।
শিক্ষা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশকিছু শিক্ষার্থী শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিচ্ছে। অথচ কোচিং সেন্টারে নিয়মিত ক্লাস করছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির উদ্বেগজনক চিত্রে উৎকণ্ঠিত।
অনেক স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে। ক্লাসে নিয়মিত অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে চিঠিতে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। এদিকে এ নিয়েও শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মান উন্নয়নে নজর না দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য তাগিদ দেওয়া হলেও কোন কাজ হচ্ছেনা। এতে ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই ক্ষীণ। কোচিং সেন্টার বন্ধে সরকার তৎপর না হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মান কীভাবে বাড়ানো যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সে ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া জরুরি। শ্রেণি কক্ষে মানসম্মত পড়াশোনা না হওয়ার কারণেই প্রধানত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীরা বলেন, কোচিং সেন্টারে নিয়মিত নোটও দেওয়া হচ্ছে। তাই ক্লাসের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঐ শিক্ষকের কোচিং সেন্টারের নিয়মিত শিক্ষার্থী হয়ে উঠেছি। স্কুলে ঠিকমত পড়া লেখা হয়না কি করবো। পীরগঞ্জ উপজেলার
রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বেশিরভাগ স্কুল-কলেজে ঠিকমতো পড়াশোনা হচ্ছে না। কোচিং করে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবে পরীক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এনামুল হক নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই পেশাগত কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। স্কুল-কলেজে ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে না। বাসায় সব সাবজেক্টের জন্য আলাদা প্রাইভেট টিউটর রাখাও তাদের পক্ষে অসম্ভব। তাই কোচিং সেন্টারই তাদের ভরসা। কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হলে সব শিক্ষার্থীর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোশাররফ হোসেন, ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অতুল চন্দ্র রায়, এবং পীরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম জানান, আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা কোচিং করেনা তারা প্রায়ভেট পড়ে। কোচিং সাধারনত হাই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা পড়ে কারণ তাদের পরীক্ষা আছে। আমাদের তো সমাপনী পরীক্ষা নেই। পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মফিজুল হক বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। তবে কখনো এর ভালো সুফল মেলেনি। নানা কৌশলে বিপুলসংখ্যক কোচিং সেন্টার খোলা রাখা হয়েছে। অনেক কোচিং সেন্টারের সামনে বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে ভেতরে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। কোনোটিতে আবার বাইরে তালা ঝুলিয়ে অন্ধকার রেখে ভেতরে লাইট জ্বালিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো কোচিং সেন্টার তাদের দিনের সময়সূচি পাল্টে রাতে ক্লাস নিয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ঘাড়েই হয়রানির বোঝা চেপেছে।’ এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুলাহ জানান, আমরা নিয়মিত মিটিং করে প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দিচ্ছি যেন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানো যায়। উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য হলেও কোচিং সেন্টার সিস্টেমে যেন ক্লাস নেয়।