আলমগীর ইসলামাবাদী,চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর সহযোগী পরিচালক, মুবাল্লিগে ইসলাম হযরত আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.) বলেছেন, যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করেছেন। হযরত নূহ (আ.) সাড়ে নয় শত বছর এই দাওয়াতের কাজ করেছেন। অনুরূপ হযরত ইবরাহীম (আ.) এই দাওয়াতের কাজ করেছেন, হযরত মূসা (আ.) হযরত ঈসা (আ.); এভাবে সমস্ত নবী-রাসূলরা এই দাওয়াতের কাজ করেছেন। এবং এই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতে গিয়ে সব ধরনের ত্যগ-তিতীক্ষা, কষ্ট-মুজাহাদা স্বীকার করেছেন। নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন, পরিবার-পরিজন ত্যাগ করেছেন, মানুষের জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন। সর্বশেষ আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দাওয়াতের কাজ করতে গিয়ে কি পরিমান কষ্ট সহ্য করেছেন- তা আমরা কম-বেশী সকলেই জানি এবং উম্মত হিসেবে জানা থাকাও জরুরী। এই দ্বীনের খাতিরে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে হিজরত করেছেন। কাফেরদের গালি-গালাজ শুনেছেন। পাথরের আঘাতে নিজের শরীরের তাজা রক্ত প্রবাহিত করেছেন। যেই শরীরে মশা-মাছি পর্যন্ত বসা হারাম ছিল, সেই শরীরে কাফেররা পাথর মেরে রক্তাক্ত করেছে শুধুমাত্র এই দ্বীনের দাওয়াতের জন্য।
গতকাল (২২ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার ৮৪তম বার্ষিক ইসলামী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.) দাওয়াত ও তাবলীগের উপর আধ ঘন্টাব্যাপী বয়ানে এসব কথা বলেন।
বয়ানে তিনি আরো বলেন, এমনিভাবে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.) এই দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে দুনিয়ার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। আর তাই তো তাঁদের কবর আজকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাঁরা তো এই কাজের জন্য সর্বাবস্থায় তৈরী থাকতেন এবং কে কার থেকে বেশী করতে পারেন আর কে কার থেকে আগে বাড়তে পারেন, সে জন্য প্রতিযোগিতা দিতেন। অতএব, ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল উম্মাতের জিম্মাদারী হল, এ দাওয়াতের কাজ। সমস্ত উম্মতকে সরল-সঠিক পথ দেখানোর জিম্মাদারী ও দায়িত্ব হল এ উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রত্যেকের ওপর।
আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.) বলেন, যুগে যুগে বিভিন্ন পদ্ধতিতে দ্বীনি দাওয়াতের এ গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে আসছেন এ উম্মাতের মুখলেসীনরা। বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলীগের নামে যে মেহনত সারা পৃথীবি ব্যাপী চলছে, তা কেবল মাত্র উম্মাতের এ মহান যিম্মাদারী আদায় এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে দ্বীন পৌঁছানোর জন্যেই। দাওয়াত ও তাবলীগ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি উম্মাতের জন্যে তার ইলম ও সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করা আবশ্যক। ওলামায়ে কিরাম এ কাজের প্রথম স্থান ও প্রথম কাতারের দায়িত্বশীল। এরপর সাধারণ মুসলমানগণ। প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষকে কালিমা, নামায, রোযা, যিকির, তিলাওয়াত, মুয়ামালাহ-মুয়াশারাহ লিল্লাহিয়াত ও খুলুসিয়্যাতের দাওয়াত দেওয়া জরুরী।
তিনি বলেন, এজন্য এ দাওয়াতের কাজ সকল মুসলমানকে অনবদ্যভাবে করতে হবে। আখেরী নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের দিকে ডাকা ও দাওয়াত দেওয়া এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ কাজের সাথে লেগে থাকা।
বয়ানে বিপুল সংখ্যক উলামা, তুলাবাসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার তৌহিদী জনতা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন- আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া; মহাপরিচালক- দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা। মুফতি রুহুল আমীন, খতীব বায়তুল মুকাররম। আল্লামা এমদাদুল্লাহ মুহতামিম, বায়তুল হুদা মাদরাসা। আল্লামা সালাহ উদ্দীন, মুহতামিম, জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর। মাওলানা আবদুল বাসেত খান, সিরাজগঞ্জ। আল্লামা মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ, ঢাকা। আল্লামা সাঈদুল আলম আরমানী। আল্লামা হাফিজুর রহমান, কুয়াকাটা। ডক্টর আল্লামা আ ফ ম খালিদ হোসেন। ডক্টর আল্লামা হমুদুল হাসান আল-আযহারী।মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী কুয়াকাটা, আল্লামা হাসান জমীল, ঢাকা। মুফতি কেফায়তুল্লাহ শফীক, আল্লামা যাকারিয়া আযহারী, হাফেজ আব্দুল হক প্রমুখ।