কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ পাবলিক লাইব্রেরি শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। লাইব্রেরি মূল স্তরের মানুষের মধ্যে বই পড়ার জন্য জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দোতলা গ্রন্থাগারটি ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ ও শিশুপার্ক সংলগ্ন অবস্থিত। 2014 সালে ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমিনুল হক খন্দকার বাচ্চুর নিজস্ব তহবিল থেকে তিন ডেসিমেল জমিতে সূচনা ও নির্মাণ করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে তিন হাজারেরও বেশি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা নারী-পুরুষ উভয়েরই লাইব্রেরিতে বই পড়তে আসে। কেউ কেউ তাদের পছন্দের বই নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় পড়ার জন্য।
সূত্র জানায়, প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার লাইব্রেরির প্রথম তলার হলরুমে কবিতা আবৃত্তি ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য বিজয়ীদের মধ্যে আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়। লাইব্রেরির ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি পাঠকরা বিভিন্ন চিহ্নিত দিবসে বই পড়া, কবিতা আবৃত্তি, কুইজ, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকরা অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া লাইব্রেরির হলরুমে নিয়মিত কবিতা আবৃত্তির অনুশীলন ক্লাস চলে।
লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলের বই ও শিক্ষা উপকরণ দান করেন।
সম্প্রতি এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে কবিতা আবৃত্তি, অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা ও অফলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মিনহাজুল ইসলাম, নাগেশ্বরী ইউএনও ফারজানা জাহান, নাগেশ্বরী উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান, ভিতরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি, জেলা পরিষদ সদস্য মো. মাসুদা ডেইজী, একরামুল হক বুলবুলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে তিনটি সাইকেল তুলে দেওয়া হয়। কবিতা আবৃত্তিতে ভিতরবন্দের লাইট হাউস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ময়ন উদ্দিন, অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় রাজারহাটের অপর্ণা সরকার এবং অফলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় ভিতরবন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মেঘলা আক্তার বিজয়ী হয়েছেন।
লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরির পরিবেশ বর্ণিল। সবকিছু সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। দুই কর্মী যারা পাঠকদের জন্য সবকিছু পরিবেশন করে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় রঙিন ব্যানার, ছবির দৃশ্য, সাইনবোর্ড, বিনোদনের জন্য কাপ পুরস্কার এবং কমোড সিস্টেম টয়লেট সকলকে আকর্ষণ করে।
কথা হয় কুড়িগ্রাম সরকারের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী অরুণা সরকারের সঙ্গে। কলেজ, ভিতরবন্দ মহিলা কলেজের ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষের ছাত্রী সরনোলতা এবং ভিতরবন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক গ্রুপের দশম শ্রেণির ছাত্রী কুমারী বিথী রানী নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভবানীপুর, মাঝিপাড়া গ্রামের পুরোটাই জানান, আমরা একত্রিত হতাম। গ্রন্থাগারে নিয়মিত বই পড়ার জ্ঞান অর্জন। আমরা মহাপুরুষদের জীবন ইতিহাস, ভ্রমণ, গল্পের বই, উপন্যাস, রান্না, অর্থনীতি, কৃষিসহ নানা ধরনের বই পড়ি।
উদ্যোক্তা ও পাঠাগারের পরিচালক ও ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম বাচ্চু যিনি দুইবার জেলার শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সরকারী খরচে দশদিন ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেছেন তিনি জানান, আমি একটি পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমার দাদা কোবাদ আলী খন্দকারের কাছ থেকে যেহেতু তিনি শখের মতো সব ধরনের বই পড়তে অভ্যস্ত ছিলেন। কারণ গ্রন্থাগারকে জ্ঞানের ঘর বলা হয়।
আমিনুল ইসলাম বাচ্চু ২২ বছর সৌদি আরবে দায়িত্ব পালন করে বলেন, যুব সমাজকে মাদকমুক্ত ও বই পড়ে জ্ঞান অর্জনে মনোযোগী করার চেষ্টা করছি। লাইব্রেরির সদস্যরা একটি সুন্দর সমাজ গঠনে তৎপর এবং বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করেছি।