মোঃ শরিফুল ইসলাম,লালপুর,নাটোর প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ । কৃষির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে আমাদের অর্থনীতি। আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার জন্য কৃষির পাশাপাশি বিভিন্ন আয়বর্ধক কার্যক্রমের ভুমিকাও অপরিসীম । এই কৃষি অর্থনীতি গড়ে উঠার পিছনে রয়েছে আমাদের নারী সমাজের অবদান । অথচ যুগযুগ কাল ধরে আমাদের নারী সমাজ বিভিন্ন বঞ্চনার শিকার। এত বঞ্চনার পরও নারীসমাজ ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টায় সব সময় ব্রত রয়েছেন । সমাজের সম্পদ শালীরা এসব মানুষের অভাবের সুযোগ নিয়ে তাদের ভিটেবাড়ি টুকুও কেড়ে নিতে দ্বিধাবোধ করেনা । এই দুর্নিবার প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে তাদের অনেকেই সমাজে মাথা উচু করে দাড়াতে পারেন নাই । এসব সীমাবদ্ধতার কারনে নারীর পারিবারিক জীবনেও নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। এ সকল বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে নারীরা সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন । তেমনি এক নারীর নাম রোজি সুলতানা । রোজি সুলতানার বয়স ৪০ বছর। তিনি বর্তমান নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার থানাপাড়ার একজন স্বচ্ছল গৃহিণী। তার স্বামী মো: আব্দুল হাকিম একজনক্ষুদ্র ব্যবসায়ী । এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে রোজিসুলতানা ও আঃহাকিমের সুখের সংসার । তাদের সংসারের শুরুতে পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিলনা । রোজি সুলতানা স্থানীয় একটি এনজিওতে চাকুরী করতেন। কিন্তু ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাকুরী ছেড়ে দেন। চাকুরী শেষে বেশকিছু অর্থ পান, তাদিয়ে কিছু কৃষিজমি ক্রয় করে চাষ করতে থাকেন। কিন্তু তাতেও পরিবারের আর্থিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।সংসারের অভাব অনটনে রোজি সুলতানা হতাশ হয়ে পড়েন। স্বামীর হাতেও তখন ভাল কোনো ব্যবসা বা আয়বর্ধক কর্মকান্ড শুরু করার মত মুলধন ছিলনা। অভাব তাদের যেন পিছুই ছাড়ছেনা। রোজি সুলতানা ধীরে ধীরে ছাগল পালনের খামার করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু তার এই স্বপ্নের বড় বাধা অর্থ । রোজির অদম্য ইচ্ছা তাকে ভেঙ্গে পড়তে দেয়নি । কিছু দিন যাওয়ার পর সে ‘‘মুসলিম এইড বাংলাদেশ ’’ লালপুর শাখার সমিতির সদস্য হিসেবে ভর্তি হন। এবং মুসলিম এইড লালপুর শাখা হতে ছাগল পালন খাতের আ্ওতায় একলক্ষ টাকা বিনিয়োগ গ্রহন করেন। এই টাকা দিয়ে তারা দুজন মিলে ৫টি বিভিন্ন প্রজাতির মা ছাগল ক্রয় করে খামার শুরু করেন। এর পর থেকে তাদেরকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ পর্যন্ত মুসলিম এইড থেকে তারা ৬ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ গ্রহন করেছে। ছাগলের খাবারের জন্য ১ বিঘা কৃষি জমিতে ঘাসের চাষ করেছে । তা ছাড়াও বাজার থেকে কিছু খাবার ক্রয় করতে হয়। বর্তমানে তার খামারে ৪০ টি তুতাবরী , হরিয়ানাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় ছাগল আছে। ৫-৬ মাস পরপর মা ছাগলগুলো ২ – ৩ টি করে বাচ্চা দেয়। তিনি বাচ্চা গুলোকে ভালভাবে লালন পালন করে ৩ মাস পর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দরে স্থানীয়দের নিকট বিক্রি করেন। বিভিন্ন সময় কোন রোগবালাই দেখা দিলে রোজি সুলতানা দক্ষতার সাথে তা মোকাবেলা করেন ।খামারের উন্নয়নেও ছাগলের রোগ-বালাই মোকাবেলায় নিয়মিত উপজেলা প্রানিসম্পদ ও মুসলিম এইডের ম্যানেজার তাজ উদ্দিন আহাম্মেদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণে তার স্বামীও অংশ গ্রহন করেন । রোজি সুলতানার ছাগলের খামার সমাজ ও দেশের মানুষের মাংষের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন । আশে পাশের অনেকেই রোজি সুলতানার বর্তমান সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন । তারাও এখন ছাগলের খামার করার চিন্তা ভাবনা করছেন । রোজি সুলতানার সংসারে এখন আর কোন অভাব-অনটন নেই । তা ছাড়া তাদের শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর আছে। এই কবুতর থেকেও প্রতি মাসে ভাল আয় আসে। তার মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে ভাল চাকুরীজীবি ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন এবং ছেলেটি বর্তমানে এইচ এসসি পাশ করেছে।রোজি সুলতানা সামাজিক অবস্থানেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আশপাশের লোকজন তাদেরকে অনেক সম্মানকরে। ছেলে মেয়েদের নিয়ে রোজির অনেক স্বপ্ন। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শেষ করে তার ব্যবসাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে । বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে তার খামারের সুনাম । দুর্দিনে বন্ধুর মত পাশে দাড়ানোর জন্য রোজি সুলতানা মুসলিম এইডের কাছে চির কৃতজ্ঞ।