শাহজাদপুর,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্বামীর বাড়ির শয়ন কক্ষে পাতা খাতুন (২৪) নামের এক গৃহবধুর গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহতের পরিবারের দাবি দাম্পত্য কলহের জের ধরে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে স্বামী ও শশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে। পরে শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক অপারেশন আবু সাইদের নেতৃত্বে থানা পুলিশের একটি দল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। জানা যায়, রবিবার (৩রা সেপ্টেম্বর) সকাল আটটায় উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের টেটিয়ার কান্দা মধ্যপাড়ায় মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত গৃহবধু উক্ত গ্রামের মৃত নুর ইসলামের ছেলে রাসু প্রামানিকের স্ত্রী ও সিরাজগঞ্জের ভদ্রঘাট মহল্লার ইয়াকুব মন্ডলের মেয়ে । নিহতের মা ও বোন জানান, প্রায় পাচ বছর পূর্বে পাতা খাতুনের সাথে রাসু প্রামাণিকের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিবাহের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে চরম অশান্তি বিরাজ করছিল। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনই তাকে হত্যা করেছে বলে তারা অভিযোগ করেন। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, রাসু প্রামানিক জাহাজে চাকুরীর সুবাদে চট্রগ্রামে থাকেন। দীর্ঘ ৭/৮ মাস পর পর তিনি বাড়ী আসেন। এবারও ৬/৭ দিন পূর্বে তিনি বাড়ী এসেছেন। কিন্তু মনোমালিন্যের কারনে তিনি স্ত্রীর ঘরে না থেকে মায়ের ঘরে রাত্রি যাপন করছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে তাদের মাঝে দ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করলে এক পর্যায়ে রবিবার সকাল সাতটার দিকে পাতা খাতুন তার শয়ন কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। নিহতের জা শাকিলা খাতুন জানান, পাতার সাথে রাসুর সম্পর্ক ভাল ছিলনা। ঘটনার দিন সকালে আমি রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাড়ির লোকজনের কোলাহল শুনে এগিয়ে দেখি পাতাকে ঘরের দরজা ভেঙ্গে বের করে বারান্দায় তার নিথর দেহ রাখা হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যরা পাতাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ হেলাল খান জানান, এক বছর আগে দাম্পত্য কলহের জেরে সালিশের মাধ্যমে পাতা – রাসুর মাঝে সমঝোতা করে সংসারে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করা হয়। নিহত গৃহবধুর শ্বাশুড়ী জানান, ইতিপূর্বে রাসুর নামে নারী নির্যাতনের মামলাও করেছিল পাতা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি তার ছেলে ও পুত্রবধুর মাঝে দাম্পত্য কলহের কথা স্বীকার করেন। শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম মৃধা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসারের মাধ্যমে খবর পেয়ে পরিদর্শক অপারেশনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অপরদিকে পাতা খাতুনের শ্বশুর বাড়িতে উপ-পরিদর্শক আনিছুর রহমান কে পাঠানো হয়। পরে পাতা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে, তার পরিবার মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়া হবে। নিহতের লাশ সোমবার সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারন জানা যাবে।