মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরায় বধ্যভূমি স্মৃতি সৌধের স্থান নির্ধারণ ও নির্মাণে অগ্রগতির বিষয়ে বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিয়মসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাতক্ষীরার ‘৭১্এর বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন, সাতক্ষীরার ‘৭১্এর বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ চন্দ্র সরকার।
সদস্য সচিব অ্যাড. ফাহিমুল হকের সঞ্চলনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
সভায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল অহেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজি রিয়াজ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ, সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার কিশোরী মোহন সরকার, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধি কল্যাণ ব্যানার্জি, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মোস্তফা নূরুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. ইউনুচ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমিন, উন্নয়নকর্মী মাধব দত্ত ছাড়াও রাজনৈতিক নেতা আশেক-ই-এলাহি, আবু কাজি, স্বপন কুমার শীল, ওবায়দুস সুলতান, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, নিত্যানন্দ সরকার, অ্যাড: ওসমান গণি, এড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ, সনাক সভাপতি হেনরি সরদার, এড. ইকবাল লোদী, নদী বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি আদিত্য মল্লিক, সুরেশ পান্ডে ভূমিহীন নেতা আব্দুস সামাদ, প্রফুল্ল সরকার, মফিজুর রহমান, কালিপদ মন্ডল, ডা: সুব্রত ঘোষ, সালাউদ্দীন রানা, মকবুল হোসেন, জাসদ নেতা রুবেল প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে ২০ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে হাজার খানেক মুক্তিকামী মানুষ সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে আশ্রয় নেয়। পরদিন ভবন থেকে নামিয়ে পাক বাহিনী তাদের গুলি করে হত্যা করে। তাদের মরদেহ বিদ্যালয়ের পাশে দীনেশ কর্মকারের বাড়ির আঙ্গিনায় মাটি চাপা দেওয়া হয়। ওই স্থানটিতে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি মহল ওই স্থানটি দখলকরে নিয়েছে। যে টুকু ফাঁকা স্থান রয়েছে তাও দখলের পায়তারা চলছে। অবিলম্ব সাতক্ষীরা শহরের ওই স্থানে স্মৃতি সৌধ নির্মাণের দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজাড়িত সাতক্ষীরা শহরের সরকারি কিম্বা বেসরকারিভাবে কোনো মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতি সৌধ নির্মিত হয়নি। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তী প্রজন্ম ধিক্কার দেবে। অবিলম্বে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ, দেবহাটা, সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়ার বধ্যভূমির স্থান গুলো চিহ্নিত করে সেখানে স্মৃতি সৌধ নির্মাণের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সাতক্ষীরা শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্বাধীনতা বিরোধীদের ধিক্কার জানানোর জন্য একটি ঘৃণা স্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির তার বক্তব্যে বলেন, ইতিমধ্যে সাতক্ষীরা শহরের দিনেশ কর্মকারের বাড়ির আঙ্গিনায় স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সাতক্ষীরা শহরের দিনেশ কর্মকারের বাড়ির আঙ্গিনা, ঝাউডাঙ্গা, মাহমুদপুর ও হরিনগরের চারটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য স্থানগুলোতেও পর্যায়ক্রমে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করাহবে। এছাড়া তালা উপজেলার দুই স্থানে সরকারি ভাবে ইতিমধ্যে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের ঢুকতে বিনেরপোতায় তৈরি করা হবে সাতক্ষীরা গেট। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ, সাতক্ষীরার ইতিহাস ও ঐতিহ্য স্থান পাবে। যা দেখে সাতক্ষীরাকে চেনা যাবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি ভাবে ইতোমধ্যে ঢাকায় একটি ঘৃণা স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকায় নির্মিত হওয়ার পর সাতক্ষীরা ঘৃণা স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।