মোঃ ওসমান গনি (ইলি) কক্সবাজারঃ কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের হয়রানি ও ভোগান্তিতে নতুন নই । কক্সবাজার ডলফিন মোড় পর্যটক নামামাত্রই ভাল হোটেলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এক শ্রেণির দালাল চক্র তাদের টানা-হেঁচড়াসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। বেশকিছু টমটম ও রিকশাচালক এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। এতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিকরা প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পর্যটন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পর্যটকরা। অন্যদিকে পর্যটন শিল্প বিকাশে প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগী পর্যটক ও স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেট এক শ্রেণির হোটেল মালিকদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছে। কক্সবাজার ভ্রমণে কোনও পর্যটক বাস টার্মিনালে পৌঁছালেই ওঁৎ পেতে থাকা এসব চক্র কম খরচে ভাল হোটেলে থাকার কথা বলে কৌশলে নিয়ে যায় নির্ধারিত হোটেলে। আবার মাঝপথে নিয়ে গিয়ে পর্যটকদের কাছে থাকা দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে অহরহ। কক্সবাজার বাস টার্মিনালে হয়রানির শিকার পর্যটকরা শহরের বাস টার্মিনাল, কলাতলী মোড় ও সুগন্ধা পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিনই এসব চিত্র দেখা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা গাড়ি থেকে নামার সময় রীতিমত টানা-হেঁচড়া শুরু করে কিছু টমটম ও রিকশাচালক। এসব চালকরা পর্যটকদের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনে নিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আর গাড়িতে ওঠানোর পরেই শুরু হয় প্রতারণার নকশা। তারা পর্যটকদের নানাভাবে প্রলোভন দেখানো শুরু করে। এছাড়াও পর্যটকের ধরন দেখে মাদক ও যৌনকর্মী সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা বলেও হাতিয়ে নেয় টাকা। কমিশনের জন্য ওইসব দালাল চালকরা পর্যটকদের যেসব আবাসিক হোটেল বা কটেজে তুলে দেয়, সেগুলো টাকার তুলনায় খুবই নিন্মমানের। একইভাবে দালালরা খাবারের হোটেলেও নিয়ে যায় কমিশনের জন্য। সরেজমিনে দেখা যায়, কলাতলী ডলফিন মোড়,শহরের সুগন্ধা পয়েন্টে অপেক্ষামান কয়েকজন রিকশাচালককে স্থানীয় এক যুবক শহরের হাসপাতালে যাওয়ার কথা বললে তারা সাফ জানিয়ে দেয় স্থানীয়দের রিকশায় উঠাবে না। তারা অপেক্ষা করছে পর্যটকের জন্য। টমটমচালকের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা জানান, আমরা পেশাদার টমটম চালক না। শহরের কয়েকটি হোটেল ও কটেজের সঙ্গে কমিশন ভিত্তিক মৌখিকভাবে চুক্তিবদ্ধ আছি। হোটেল গুলো হলো সী আলীফ, সী নাইট,হোটেল জামান, সমুদ্র বিলাসা’হোটেল আল মারওয়াসহ প্রমূখ্য। ভুক্তভোগী পর্যটক দম্পতি আক্তার উদ্দিন চৌধুরী ও মিম আক্তার জানান, তারা কক্সবাজার এসেছেন তিনদিন আগে। আসার পথে কলাতলী ডলফিন মোড় থেকে টমটম চালকের সহযোগিতায় যে আবাসিক হোটেলে উঠেছেন,ওই হোটেলের ব্যবস্থাপনা খুবই বাজে। যদিও তাদের কাছ থেকে রুম ভাড়া রাখা হয়েছে নির্দিষ্ট মূল্যের চেয়েও দুইগুণ বেশি। একদিন পরে ওই হোটেল ছেড়ে দিয়ে তারা অন্য একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন এবং সেখানে ভাল আছেন। সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা আরেক দম্পতি সামিয়া জাহান ও আলমগীরের সঙ্গে। তারা বলেন, বাস থেকে নামামাত্রই টানা-হেঁচড়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। কক্সবাজার ডলফিন মোড়ে হয়রানির শিকার পর্যটকরা একইভাবে আরেক ব্যবসায়ী পর্যটক মুফিজুল ইসলাম জানান,তিনি এই পর্যন্ত তিনবার কক্সবাজার এসেছেন। গত বছর তার দুই বন্ধুকে ভাল রেস্টুরেন্টে খাবারের কথা বলে সমুদ্রের পাড়ের কবিতা চত্বরে নিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে ফেলে এক রিকশাচালক পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটক হয়রানির কিছু ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। ইতিপূর্বে কয়েকবার অভিযানও চালিয়েছি। পুলিশি অভিযান টের পেলেই তারা সটকে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে আমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, হোটেল মোটেল মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেনঃ পর্যটকদের সুরক্ষা ও হয়রানি থেকে বাঁচাতে ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ট্রাফিক পুলিশ কক্সবাজার। দেশে প্রথম পর্যটক সুরক্ষায় পর্যটন এলাকায় গাড়ি চালকদের ডাটাবেজ সংবলিত বারকোড রাখা হয়েছে প্রতিটি ইজিবাইক, টুরিস্ট জিপ ও বাসে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কক্স-ক্যাব’। ২হাজাী ৬শ’জন টমটম চালকে ডাটাবেজ সংবলিত বারকোড আওতায় আনা হয়েছে তিনি জানান, কিছুদিন আগেও পর্যটককে হয়রানি করায় কয়েকজন দালালকে আটক করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।