আরিফুজামান চাকলাদার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান। ৩৮ হাজার ৩৪২ ভোট ব্যবধানে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৫ হাজার ভোট ব্যবধানে প্রথমে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আব্দুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন না পেলে দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সারাদেশে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুর হয়। ফরিদপুর সরকারি ইয়াসিন কলেজে ভর্তি হন এবং কলেজ সংসদে ছাত্রলীগের ব্যানারে ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বারের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজয়ের পরবর্তী দিন সোমবার (৮ জানুয়ারি) সারা দিন আব্দুর রহমান তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর-১ আসনের তিন থানার নেতাকর্মীর ও সর্ব সাধারণের সাথে পুষ্পিত শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আব্দুর রহমান তার নিজ এলাকা মধুখালি উপজেলা ঘুরে নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বোয়ালমারী উপজেলার চৌরাস্তায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে তিনি বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাথে ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময় করে আলফাডাঙ্গা উপজেলার সরকারি আরিফুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন। আলফাডাঙ্গার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুলের মালা দিয়ে আব্দুর রহমানকে বরণ করেন এবং নব নির্বাচিত এমপির ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের সামনে বিরাট এক অশনিসংকেত, এই অশনিসংকেতকে দমাতে হবে; তা না হলে এই সমাজ পঙ্গু হয়ে যাবে। এই প্রজন্মের ওপর আমাদের একটা দায়িত্ব আছে, রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণে, রাজনীতি করতে গিয়ে নানান সময় বিদ্রুপ ও কটুকথাও হজম করে থাকি, তারপরও রাজনীতি করি মানুষ সেবার ব্রত নিয়ে অনেক কিছু আমি সহ্য করেছি, আমার রাজনীতির শেষ প্রতিশ্রুতি হচ্ছে এই আওয়ামী লীগের সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চাই, যেখানে ঘুন ধরেছে, সেই ঘুনকে পরিষ্কার করতে চাই তা না হলে এই সংগঠনের ক্যানসার হবে। আমি উপস্থিত থেকে আলফাডাঙ্গার তৃণমূল থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলাকে সাজাতে চাই আলফাডাঙ্গার মানুষ অনেক মুখ উচু করে চলতেন, এই আব্দুর রহমানকে শাস্তি দিতে গিয়ে কতখানি ছোট হয়েছেন চিন্তা করেন। রাজনীতিতে আমার কোনো চাওয়ার কিছু নাই, যাবার আগে আওয়ামী লীগের থেকে জঞ্জাল সাফ করে যাবো। এই জনপদের মানুষ শেখ হাসিনার জন্য পাগল কিন্তু ভোটের আগে অর্থের কাছে কিভাবে বিক্রি হয়।
আব্দুর রহমান আফসোস করে বলেন, আজ শাহ জাফর (সাবেক এমপি) যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতো, এই ভোট পেতো আমার কোনো আফসোস হতো না, কিন্তু মানিলন্ডারিং করা টাকা, কালো টাকা দিয়ে আলফাডাঙ্গার নেতাকর্মীকে কীভাবে কিনে নিল।
উল্লেখ্য, পূর্ব থেকেই ফরিদপুর-১ আসনের মধুখালি উপজেলা এবং বোয়ালমারী উপজেলায় বিএনপি এবং অন্য দলের সাথে আওয়ামী লীগ সমান ভোট পেয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে অবস্থান করে। আওয়ামী লীগের দুর্গ খ্যাত আলফাডাঙ্গা ছিল নৌকার বিশেষ ভোট ব্যাংক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ নৌকাকে ভোট দিয়ে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগকে অন্য দুই উপজেলার সমতাকে টপকে জিতিয়ে নেওয়ার রেকর্ড অর্জন করে এসেছে যার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আলফাডাঙ্গাকে তুলনা করতেন দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই রেকর্ড ভেঙে আলফাডাঙ্গায় নৌকার চরম ভোট বিপর্যয় ঘটেছে। উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নিজ কেন্দ্রেও নৌকার ভোট বিপর্যয় হয়। ১০ হাজার ৬৩৫ ভোট ব্যবধানে আলফাডাঙ্গাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমনের ঈগল প্রতীকের কাছে নৌকা হেরে যায়।
নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৩১ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৯৮৯টি ভোট। এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৮১ জন। ১৯৬টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।