মোঃ মজিবর রহমান শেখ,ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় যৌতুক ছাড়াই একসাথে বিবাহ করে প্রসংসায় ভাসছেন হারুন উর রশিদ ও মুরাদ আলম নামে দুই বন্ধু , প্রায় ৫ বছর একসাথে পড়াশোনা করেছেন হারুন অর রশিদ ও মুরাদ আলম। এবার বিয়ের পিড়িতেও বসলেন একসাথে, তাও আবার যৌতুক বিহীন। যৌতুক ছাড়াই এক লক্ষ টাকা দেন মোহর নগদ পরিশোধ করে স্ত্রীকে গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল বিকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ ক্রীড়া সংস্থা মাঠে তাদের দুজনের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বড়বাড়ী ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী দবিরুল ইসলাম দুজনের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন। বর্তমান সমাজে যৌতুক বিহীন বিবাহ উৎসাহ যোগাতে ব্যতিক্রম এই আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা গ্লোবাল রিলিফ ট্রাস্ট (জিআরটি)। বিবাহ পরবর্তী দাম্পত্য জীবন সুখের করতে দোয়ার পাশাপাশি বর ও কনেকে আসবাবপত্র, সেলাই মেশিন ও কাপড় চোপড় উপহার দিয়েছে সংস্থাটি। জোড়া বিয়ে হয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার কাদিহাট গ্রামের আ: হামিদের ছেলে হারুন অর রশিদের সাথে একই উপজেলার চন্দন চহট গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মেয়ে মোছা: বুশরা আক্তারের এবং ধুলঝারী গ্রামের সেরকেট আলী ছেলে মুরাদ আলমের সাথে কাদিহাট আমতলা গ্রামের আকবর আলীর মেয়ে আফসানা আক্তারের। বর হারুন অর রশিদ ও মুরাদ আলম জানান, দুই বন্ধু একসাথে পড়াশোনা করেছি। যৌতুক বিহীন বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল। তবে একসাথে দুজনের বিয়ে হবে এটা কখনো ভাবিনি। এদিকে দুই বন্ধুর সাথে একই দিনে যৌতুক বিহীন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে খুশি কনে বুশরা ও আফসানা। দাম্পত্য জীবনে সকলে নিকট দোয়া চেয়েছেন তাঁরা। কনে বুশরার বাবা জানান, চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে তিনি আগে যৌতুক ছাড়া বিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় মেয়েকেও যৌতুক ছাড়া বিয়ে দিলেন। ইচ্ছে রয়েছে চতুর্থ মেয়েও তিনি যৌতুক ছাড়া বিয়ে দিবেন। এদিকে বর মুরাদের বাবাও জানালেন একই কথা। চার ছেলের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ছেলেকে যৌতুক ছাড়া বিয়ে দিলেন। এরপরে দুজন ছেলেও একই ভাবে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। বর ও কনের চারটি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি পরিবারের যৌতুক প্রথা বিরোধী। তারা নিজেরাও পূর্বের বিয়ে গুলো যৌতুক ছাড়া করেছেন।
ভবিষ্যতে তাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের যৌতুক প্রথা থেকে বের হয়ে আসতে এমন উদ্যোগ তাদের। আয়োজক কমিটি দাতা সংস্থার জিআরটির স্থানীয় প্রতিনিধি মুফতি শরিফুল ইসলাম জানান, চারটি পরিবারের সম্মতিতে যৌতুক বিহীন বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বিবাহ সম্পন্ন এবং জোড়া দম্পত্তিকে সংস্থার পক্ষ থেকে উপহার প্রদান করা হয়েছে। যৌতুক বিহীন বিয়ে করার উৎসাহ হিসেবে বরযাত্রী ও বিয়ের যাবতীয় আয়োজন করা হয়েছে সংস্থার পক্ষ থেকে। আগামীতে এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, গ্রামে বিয়ের পর যৌতুক লেনদেনকে কেন্দ্র করে দাম্পত্য জীবনে তিক্ততা তৈরি হয়। পরে অনেক সংসার ভেঙ্গে যায়। সামাজিক এমন অবক্ষয় থেকে বেরিয়ে আসতে যৌতুক বিহীন বিয়ের বিকল্প নেই। সংস্থাটির এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি যারা বৃত্তবান আছেন, সুযোগ থাকলেও তারাও এমন মহৎ কাজে এগিয়ে আসতে পারেন।