

ঈদগাঁও, কক্সবাজার । বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আইন অঙ্গনে বেআইনি কাজ করেছিল। যারা আদালতে ভাংচুর চালিয়েছিল তারা তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে বিচারপতি বানিয়েছিল। তিনি শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলন- ২০২৫ এ প্রধান অতিথি ছিলেন। জামায়াত আমীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছিল। শত নির্যাতন এবং দমন পীড়ন সত্ত্বেও জামায়াতের কোন নেতৃবৃন্দ দেশ ত্যাগ করেননি। বছরের পর বছর জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু করে দেশের সকল অফিস জোরপূর্বক বন্ধ রাখা হয়েছিল। তারা বুঝতে পারেনি আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মান দেন আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, কক্সবাজার কি কোন সতীনের সন্তান ছিল? এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরও তারা এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেনি। তিনি উল্লেখ করেন, জামায়াত জন রায়ের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা ও জনসেবার সুযোগ পেলে কক্সবাজার বাসির উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন। জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, তারা বেআইনিভাবে জামায়াতে নিবন্ধন বাতিল ও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। সারাদেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদীদের গুলি করে হত্যা করতো। কিন্তু ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সে অবস্থার পরিবর্তন করে দিয়েছে। তরুণদের আত্মত্যাগ আমাদেরকে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। দেশ এখন স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এটা আল্লাহর মহা পরিকল্পনার অংশ বিশেষ। যার নেতৃত্বে ছিল দেশের আপামর ছাত্র- তরুণ সমাজ। দেশের কোটি কোটি মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল এতে। অনেকে এ অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড দাবি করলেও তা সত্য নয়। আমরা সর্বাগ্রে এ গণহত্যার বিচার চাই। তবে এর আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে হবে। অন্যথায় শহীদদদের আত্মা কখনো শান্তি পাবে না। কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও কুতুবদিয়া- মহেশখালী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, আরেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, চকরিয়া- পেকুয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক মঞ্জু, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, জেলা জামায়াত সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, জেলা জামায়াত নেতা মুফতি মাওলানা হাবিব উল্লাহ, জেলা এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, জেলা নেতা এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, সংসদ সদস্য প্রার্থী শহীদুল আলম বাহাদুর, এডভোকেট সলিম উল্লাহ বাহাদুর, কক্সবাজার শহর জামায়াত আমীর আব্দুল্লাহ আল ফারুক, কক্সবাজার সদর উপজেলা আমীর অধ্যাপক খুরশীদ আলম আনসারী, ইসলামী ছাত্র শিবিরের কক্সবাজার জেলা সভাপতি সালমান নূরী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা হেদায়েত উল্লাহ, ফজলুল্লাহ মোঃ হাসান সহ বিভিন্ন উপজেলার আমীর-সেক্রেটারি ও শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। সকাল ৯ টায় এ সম্মেলন শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে শেষ হয়। সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই কলেজ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে জামায়াতের কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা এতে যোগ দেন। সম্মেলন উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মহিলাদের বসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। যাতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মহিলা জামায়াতের বিপুল সংখ্যক সদস্য অংশ নেন। সম্মেলন স্থলে ওড়ানো হয় ড্রোন। পুরো অনুষ্ঠানটি এলইডি প্রজেক্টরে প্রদর্শন করা হয়। আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন পুলিশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও ছিলেন নজরদারিতে। সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ কক্সবাজার বাসির সুখ-দুঃখ ও উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা বলেন।