মোঃ মজিবর রহমান শেখ,, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,
ঠাকুরগাঁও জেলায় নির্বাচনী উত্তাপে আতঙ্কিত ভোটাররা । ঠাকুরগাঁও জেলায় তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনী সহিংসতায় ৩ জন নিহতের প্রভাব ও বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনী পরিবেশ। এ নিয়ে আতঙ্ক বেড়েছে ভোটারদের মাঝে। পুলিশের গাড়ির সাইরেনেও বাড়তি এক ভীতি সৃষ্টি হয়েছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জুড়ে। ভোটের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আগামী ২৬ ডিসেম্বর ইউপি নির্বাচন ঘিরে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার ২০ ইউনিয়নে চলছে প্রচার-প্রচারণা। তবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে বেড়ে চলছে সংঘাতের পরিমাণ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইউনিয়ন থেকে সংঘর্ষের ঘটনার খবর আসছে। যার প্রভাব পড়ছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। প্রতিনিয়ত নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসছেন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মেম্বার প্রার্থীরাও।
পেশায় ব্যবসায়ী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আচকা ইউনিয়নের এক বাসিন্দা রেজাউল বলেন, ‘ভোট দিতে যেতে চেয়েছিলাম। আমি সব সময় ভোটের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। তবে এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। আমাদের ইউনিয়নে নাকি দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। তাই ভোটের দিন কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টা বিবেচনায় রেখেছি।’
রাজাগাঁও ইউনিয়নের সাধারণ ভোটার জসীম শেখ জানান, তাদের ইউনিয়নে নৌকা মার্কার প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম সরকারের সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কিত রয়েছেন সেই এলাকার সাধারণ ভোটাররা। ভোটের দিনেও ভোট দিতে যাওয়ার বিষয়ে অনেকেই ভাবছে। এই পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করা ও কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে ভোটাররা বাসা থেকে বের নাও হতে পারেন।
গত ৭ তারিখে প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে রিটার্নিং অফিসারদের কাছে আসা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজাগাঁও ইউনিয়নে ভোটারদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে হুমকি দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহাগ ও কুদ্দুসের পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আকচা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা ঘোড়া মার্কার পোস্টার ছিঁড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বাদশাহ। এ বিষয়টি নিয়ে বারবার মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে দুই পক্ষ। রায়পুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী নুরুলের লোকজনের ওপরে রাতের আঁধারে অতর্কিত হামলায় ছয়জন আহত হয় ।
এদিকে বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বনি আমিনের ছেলে পাপন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়ার অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিব। নারগুন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী পয়গাম বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচনে বিএনপি আসেনি সেহেতু স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে দলীয়ভাবে কোনো বাধা নেই। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করছি আমি। নৌকা প্রার্থীর লোকজন আমার কর্মী সমর্থকদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করছে। ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। ভোটের দিন কেউ কেন্দ্রে যাওয়ার সাহস পাবে কি না সেই শঙ্কায় আছি।’রায়পুর ইউনিয়ন থেকে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী পার্থী মামুনের সমর্থকেরা সাধারণ ভোটারদের হয়রানি করছে। একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করার একটি নকশা আঁকছে তাড়া। তাই প্রশাসনের কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ করছি।’এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর মনতোষ কুমার দে জানান, ঠিক কিছু দিন আগেই এই জেলায় তৃতীয় ধাপে ১৮ ইউপি নির্বাচন হয়েছে। সেই আমেজ এখনও শেষ হয়নি। তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিচ্ছে জেলার সাধারণ মানুষেরা। পীরগঞ্জে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা এখনও তাজা। সেই ভয়ে আগামী ২৬ তারিখের নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। তবে নির্বাচনে কোনো প্রকার সহিংসতার সুযোগ দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যের উপস্থিতি থাকবে। কোনো প্রকার সহিংসতার সুযোগ দেয়া হবে না।’ তাই সাধারণ ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান করেছেন তিনি।
মোঃ মজিবর রহমান শেখ