কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ
কিশোরগন্জ ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রঘুন্নাথপুর গ্রামে সরকারি বেসরকারী কোন স্কুল না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় পাচ শতাধিক শিশু। এ ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্টান না থাকায় যে কোন নির্বাচনের দিন মুসলমানদের একমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্টান রঘুনাথপুর পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদটি ব্যবহার হয় ভোট কেন্দ্র হিসেবে। এতে মসজিদের পবিত্রতা নষ্টসহ মুসুল্লিদের নামাজে ব্যাঘাত ঘটে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, রেল লাইন আর ব্যস্হতম মহাসড়কের পাশ ঘেষে শিবপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম রঘুনাথপুর। জনসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। একটি বিদ্যালয়ের অভাবে এ গ্রামের অধিকাংশ শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘ কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের (৬নং ওর্য়াড) রঘুন্নাথপুর গ্রামে গড়ে উঠেনি কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্টান। এতে করে প্রতিবছরই মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় নিরক্ষরই রয়ে যাচ্ছে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। এই গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান না থাকায় শিক্ষার অভাবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে শিশু শ্রম, নির্যাতন, মাদকাসক্ত ও বাল্যবিয়ের পরিধি। পার্শ্ববর্তী গ্রামের যে বিদ্যালয়গুলো আছে তাও অনেক দুরের রাস্তা। অনেক দূরের স্কুল হওয়ায় নিয়মিত ক্লাসও করতে তাদের সমস্যা হয়। তাছাড়া রেললাইন ও ব্যস্ততম ভৈরব কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। অনেকেই আবার স্কুলে যেতে না পেরে বিভিন্ন শিশু শ্রমে ঝুঁকে পড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বাচ্চারা শিক্ষার আলো থেকে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। তবে কোনো কোনো গ্রামে দুটি সরকারি স্কুল ও একাধিক বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে শিশুরা দূরের স্কুলে পড়াশোনা করতে প্রায় সময় দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। দূরের স্কুলে সহজে বাচ্চাদের পাঠাতে পারছেনা আবার পাঠালেও রাস্তা পারাপার হওয়ার ভয় থাকে। তাই, এ গ্রামে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে খুবই দ্রুত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য,২০১৪ ও ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প ‘বিদ্যালয় বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে আড়াই হাজার নতুন স্কুল নির্মাণ করা হলেও রঘুন্নাথপুর গ্রামের বিষয়টি নজরে পড়েনি কারো। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্কুল নির্মাণের দাবি জানান গ্রামবাসী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।
মসজিদের মোয়াজ্জেম মোঃ মস্তু মিয়া বলেন, এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান না থাকায় শিশুরা লেখা পড়া করতে পারছেনা। এছাড়াও নির্বাচনের দিন পবিত্র মসজিদকে ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করায় মসজিদের পবিত্রতা নষ্টসহ মুসুল্লিদের নামাজের ব্যাঘাত ঘটে।
একজন স্কুল শিক্ষক মো: সোহরাব হোসেন বলেন, আমি এ গ্রামের ছেলে হয়েও নিজের এলাকার ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পারছিন না এটা আমার কাছে খুবই দুঃখ জনক। সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কাছে আমার অনুরোধ এ গ্রামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্টান স্থাপন করে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার আলোয় আালোকিত করবে।
এলাকাবাসী জানান, আমাদের এ গ্রামে কোন স্কুল নেই। যে কয়েকটা আছে তাও আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দুরে। স্কুলে যেতে হলে রেল লাইন ও ব্যস্হতম মহাড়ক পাড় হয়ে যেতে হয়। দুর্ঘটনার আশংকা থাকে প্রতিনিয়ত। অর্থের অভাবে অনেক অভিবাবক শিশুদের যাতায়াত খরচ দিতে না পারায় শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনা। শিশুদের অল্প বয়সেই বাল্য বিয়েসহ শ্রমজীবি কাজে লাগিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
স্কুল গমনিচ্ছুক শিশুরা বলেন, আমাদের গ্রামে কোন স্কুল না থাকায় লেখাপড়া করতে পারছি না।দূরের স্কুলে যেতে হলে রেল লাইনের পাশ দিয়ে মহাসড়ক পাড় হয়ে স্কুলে যেতে আমাদের ভয় করে। আমাদের গ্রামে একটা স্কুল বানিয়ে দিলে আমরা লেখাপড়া করব।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল আলিম রানা বলেন, রঘুনাথপুর এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাবী অনেক দিনের ছিল। এ এলাকার শিশূরা বিভিন্ন প্রকারের প্রতিবন্ধকতা রেল লাইন হাইওয়ে রোড পাড় হয়ে দুরে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা নেয়। এ এলাকায় একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্টা হলে শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যৎ ও লেখাপড়ার জন্য ভাল হবে। আমাদের পক্ষ থেকে যত প্রকারের সহযোগিতা করা সম্ভব আমরা করে যাব যাতে করে এলাকার শিশুরা লেখাপড়া করতে পারে এবং উন্নত জীবন গড়তে পারে।