জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
জামালপুর সদর, সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে এবার ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। জেলার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে নতুন মরিচ।
শ্রম মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবার মরিচ চাষে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। কৃষকরা বলছেন, মরিচ চাষে যে খরচ হয়েছে সেটাও তুলতে পারছেন না। আর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মরিচ চাষিদের উন্নত জাতের মরিচ চাষে সহায়তা করছেন তারা।
সরিষাবাড়ির আওনা ইউপির কুলপাল চরের মরিচচাষি ইলিয়াস তিন বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি জানান, অন্য বছর কৃষকের কাছ থেকে পাইকাররা ৭৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায় প্রতিবিঘা মরিচ ক্ষেত কিনে নেয়। এবার এখনও পাইকার আসতে শুরু করেনি। কাঁচা বেচতে না পারলে পাকা করে তুলবেন বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
কুলপাল চরের মরিচচাষি মুকুল মিয়া এ বছর চার বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা মরিচ ক্ষেত ৭৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানান। সরিষাবাড়ির সাতারিয়ার নারী শ্রমিক কমলা, আনোয়ারা, জুলেখা, ওজুফা মরিচ ক্ষেতে কাজ করেন। তারা বলেন, একজন পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিক বেশি মরিচ তুলতে পারে। ফলে মরিচ তোলার সময় তাদের শ্রমের চাহিদাও বাড়ে। কেউ দিন হিসেবে। আবার কেউ প্রতিমণ চুক্তিতে ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মরিচের ব্যবসায়ীরা মরিচ কিনে স্তূপ করে রাখছেন দেশের বিভিন্ন জেলায় নেয়ার জন্য। এদিকে বাজারে দাম ভালো না থাকায় অনেকেই মরিচ তুলছেন না। জামালপুর সদরের কেন্দুয়া কালিবাড়ি বাজার কাঁচা মরিচের জন্য বিখ্যাত। সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার দুইদিন হাট বসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারগণ মরিচ কেনার জন্য এ হাটে আসেন। হাটের দিন ২শ থেকে ৩শ ট্রাক কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মরিচচাষিরা কাঁচামরিচ তুলে এ হাটে বেচতে আসেন।
নাটোর থেকে মরিচ কিনতে আসা পাইকার আব্দুল আলীম বলেন, বছরের ৬ মাসই এ হাট থেকে মরিচ কিনে নেই। আবার এ অঞ্চলে শেষ হলে ওপার থেকে কিনে এনে এপারের বিভিন্ন হাট বাজারে পাইকারি বিক্রি করি। এদিকে জামালপুর সদর উপজেলার হাজিপুর, কেন্দুয়া, ভাটারা, ঘোষেরপাড়াসহ জেলার ৬ উপজেলায় মরিচের ব্যাপক চাষ হয়েছে। মরিচ চাষে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর উন্নত জাতের মরিচ চাষ করা হয়েছে। এরই মধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করেছে কাঁচা মরিচ। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত মরিচ বাজারে এনে দাম কম পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
কৃষকরা বলছেন, বাজারে দাম না থাকায় খরচও উঠছে না। সার, বীজ, কীটনাশক, গাড়িভাড়া এবং শ্রমিক খরচ দিয়ে বাজারে যে দামে মরিচ বিক্রি হচ্ছে তাতে লোকসানে পড়ছেন তারা। পাইকারী বাজারে প্রতিকেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। খোলা বাজারে যেখানে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এ বছর মরিচ চাষ করে ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারবে না তারা। তবে কৃষি কর্মকতা জানিয়েছেন, এবার জেলায় উন্নত জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। কৃষকদের লাভবান করতে মাঠ পর্যায়ে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নিতাই চন্দ্র বণিক বলেন, এ বছর জেলায় ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া ও রোগ বালাইয়ের বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয়েছে। এতে ফলনও ভালো হয়েছে।