সাইফুর রহমান শামীম কুড়িগ্রাম।। : লতাপাতা আর সবুজ শ্যামলে ভরপুর ছিল গ্রামবাংলার পথঘাট প্রান্তর অার লোকালয়। বিভিন্ন ঋৃতুতে নানান রংঙে সাজতো গ্রামবাংলার প্রকৃতি।
অাগে গ্রামবাংলায় অনেক দেশী গাছ গাছালী পাওয়া যেত । এখন অনেক গাছ গাছালী বিলুপ্তির পথে। এ রকম একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি হচ্ছে বেত গাছ। অাগের মত গ্রাম-গঞ্জে বেত গাছ তেমনটা দেখা যায় না।
বেত গাছ সাধারণত গ্রাম-গঞ্জে রাস্তার পাশে, বসতভিটার পিছনে , পতিত জমিতে ও বন-জঙ্গলে কিছুটা অার্দ্র জায়গায় জম্মে। খুব অল্পদিনের মধ্যেই বেত গাছ ঘন ঝাড়ে পরিণত হয়।
চির সবুজ এই উদ্ভিদটি পূণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়ে বেশী লম্বা হয়ে থাকে। বেত গাছে ফুল ধরার অাগে গাছ থেকে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ অাসে।
তখন পিঁপড়া, মৌমাছি, ভিমরুল এই রস খেতে বেত গাছে ভিড় জমায়।
বেত গাছের ফলকে বেতফল, বেওুন, বেথুন, বেথুল, বেতগুটি, বেওুইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয় অঞ্চল ভেদে।
এই উদ্ভিদ ত্রুান্তীয় ও উপত্রুান্তীয় অঞ্চলে ভেজা ও জংলা নিচু ভূমিতে ভাল জম্মে। বেত গাছ চিকন ও লম্বাটে হয়ে থাকে। বেত গাছ কাঁটাযুক্ত ও শক্ত হয়ে থাকে। বনজঙ্গলে কাঁটা ও ঝোঁপ অাকারে জম্মে ।
এক গাছের সাথে অন্য গাছ প্রায় সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। একটি গাছ ধরে টান দিলে প্রায় সব গাছ নড়ে ওঠে। চৈত্র মাসে অাঙ্গুরের মত থোকায় থোকায় ধরে।
বাংলাদেশের একটি বিলুপ্ত প্রায় ফল। ২-৩ দশক অাগেও অামাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জের বনজঙ্গলে ও নিচু ডোবার ধারে বেত গাছ দেখা যেত।
বেত ফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার অাঁশে ঢাকা ছোট ও কষযুক্ত টক – মিষ্টি ফল। বীজ অত্যন্ত শক্ত হয়ে থাকে। কাচা ফল সবুজ বর্ণের, পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে অাথবা সাদা রং এর হয়ে থাকে। এর প্রতিটি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। ফল পাকে মার্চ – এপ্রিল মাসে। ইহা অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। এটি বর্তমানে অাবাসন সংকটের কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে।
অাগের মত বেতুন বা বেত ফল অার চোখে পড়ে না। বাংলাদেশে প্রায় এক বিপন্ন উদ্ভিদ ও ফল। বেত গাছ এখন দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করা হয়।
বেত দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পগুলো হলো, চেয়ার টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গাড়ি, ঢুষি, হাতপাখা, চাইলোন, টোকা, গোলা, ডোলা, টোপা, চাঁচ, ধামা, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা ও ফুলদানিসহ নানা কাজে এর কদর রয়েছে।
বেত গাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। এগুলো দৃষ্টিনন্দন, টেকসই, মূল্যবান, নান্দনিক এবং প্রাকৃতিক। বেত একটি মূল্যবান টেকসই ও সকল শ্রেণীর দ্রাব্য। জীব বৈচিত্র্য রক্ষাথে এটি অধিক পরিমানে রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণে যন্তবান হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে মাটির গুনে এখানে হাজারো তরুলতার সমাহার। নদীবাহিত পলি, বৃষ্টিপাত অামাদের দেশকে দিয়েছে এক উর্বর ভূমি।
দেশে রয়েছে ৫হাজারের বেশী প্রজাতির বন্য গাছপালা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে অনেক বন্য গাছ গাছড়াই এখন বিলুপ্তির পথে অাবার অনেক বিদেশি গাছের অাগ্রাসনেও হারিয়ে যেতে বসেছে বুনো এ প্রজাতি।
অামাদের নিজস্ব গাছ পালা নিয়ে তেমন গবেষণা হচ্ছে না। অাবার বিদেশী ফলের গাছ, কাঠের গাছ ও ফুলের গাছ রোপণ এবং চাষের জন্য গ্রামবাংলার মেঠোপথ ও প্রাকৃতিক বন ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনেকে বিদেশি ফল চাষাবাদে মানুষকে অনুপ্রেরণা দেওয়া হচ্ছে । এতে করে দেশি গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। অামাদের দেশের কবিরাজ, অাদিবাসীরা ও গ্রামবাংলার লোকজন এখনো নানা ঔষধ এবং ফলের জন্য দেশীয় গাছ পালার ওপরই নির্ভরশীল।
সকল কবিই দেশের প্রকৃতি ও গাছ পালার জয়গান করেছেন। বেতফল ছোটবেলার এক অতি কাঙ্ক্ষিত ফল।বেত ফল পরিপক্ক হলেই বেত ঝাড়ে হানা দিত গ্রামের দুরন্ত ছেলে ও মেয়ের দল। কাটাঁর আঘাত সহ্য করে বেত ফল নিয়ে আসতো।
ফলের বাইরের খোসা ফেলে যখন রসালো অংশটা হাতে অাসতো। তখন কিশোর ও কিশোরীরা সবার সাথে মহা আনন্দো ভাগাভাগি করে খেত।
গ্রামবাংলায় বেতের কচি পাতা তরকারি হিসাবে খাওয়া হয়। বেত ফল লবন ও মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খেতেও খুব মজার। বর্তমান প্রজম্মের ছেলে ও মেয়েদের অনেকেই জানে না বেত ফল কি?