রাম বসাক, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
হিন্দু সম্প্রদায়ের বারো মাসে তের পার্বণ এ কথাটি প্রচলিত রয়েছে আমাদের সমাজে। সেই হিসাবে দূর্গা পুজা,কালী পুজা, লক্ষীপুজা সেরে উঠতেই এসে গেল বাগদেবী সরস্বতি পুজা। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে সরস্বতি পুজা। এই পুজা উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরী শিল্পীরা।
আর মাত্র কয়েকদিন পুজার বাঁকী থাকলেও এখনও পর্যন্ত সরস্বতি পুজার তেমন কোন উৎসবের আমেজ পড়েনি বলে অনেকে মনে করছেন। করোনার মহামারী থাবায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও সরকারি বেশ কিছু বিধি নিষেধ থাকার কারণ বহু প্রতিষ্ঠানে এবার সরস্বতি পুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা বলে এমনটাই বললেন অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়োজক বৃন্দ।
এদিকে সারা বছর আশায় বুধ বেঁধে থাকা সরস্বতি প্রতিমা তৈরী শিল্পীবৃন্দ জানালেন এবারের পুজায় তাদের অর্থনৈতিকভাবে খুব মন্দা যাবে। এখনও পর্যন্ত তাদের তৈরী প্রতিমা গুলির অর্ডার ঠিকমত পাননি।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার প্রাননাথ পুর গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতি প্রতিমা তৈরী শিল্পী রনজিত পাল জানালেন করোনার থাবায় তাদের প্রতিমার অর্ডার অনেক কম। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাত্র ১৬ খানা প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন। যে অর্ডার গুলি পেয়েছেন সে গুলি পারিবারিক পুজার অর্ডার। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এখনও অর্ডার পাননি বলে জানালেন। তিনি বলেন শুধু এ বছর নয় গত বছরও করোনার কারণে প্রতিমা শিল্পীদের অর্থনৈতিকভাবে মন্দা গেছে।গত বছর তিনি বড় ছোট মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ খানা প্রতিমার অর্ডার পেয়েছিলেন। এ বছর গত বছরের তৈরী প্রতিমা ছিল সেটা এ বছর নতুন করে মাটি লেপন দিয়ে নতুনভাবে রং করছেন। অনেকে এ কারণে এই পেশায় কম সময় দিয়ে অন্য পেশায় সময় বেশী দিচ্ছেন বলে জানান। এ বছর তিনি বড় প্রতিমার মূল্য নির্ধারণ করেছেন ৩৫০০টাকা, মাঝারী প্রতিমার মূল্য নির্ধারণ করেছেন ১০০০টাকা ও ছোট প্রতিমার মূল্য ৭০০টাকা। এ কাজে তিনি সহ আরও তিন জন যুক্ত রয়েছেন। এক এক জনের দৈনিক মজুরী ৪শত থেকে ৮শত টাকা বলে জানান। এ ছাড়া প্রতিমার উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের অংশ খুব কম থাকে বা এক রকম না থাকার মত জানালেন। বর্তমানে উপকরণের বাজার মূল্য পূর্বের চাইতে অনেক বেশি। বর্তমানে প্রতিমার চুল ৫০০ টাকা , যাহা আগে ছিল ৩০০টাকা। এরকম প্রতিটা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
অনন্ত পাল উপজেলার নরিনা গ্রামের একজন মৃত শিল্পি। তিনি নিজ বাড়ীতে ব্যস্তসময় পার করছেন প্রতিমা তৈরিতে।তিনি বলেন এবার প্রতিমা তৈরি কম এবং খরচও গত বছরের তুলনায় অনেক টাই বেশি।
শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নে পাল পাড়ায় প্রতিমা তৈরী করছেন শুভংকর। তিনি বলেন এ পর্যন্ত ৭টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন। এদিকে প্রতিমা তৈরী করেছেন ৬৫ খানা। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় বৃহত আকারে সরস্বতি পুজার উৎসব হতে পারে সে আশায় বুক বেঁধে এই অধিক সংখ্যক প্রতিমা তৈরী করে অর্ডার না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন বলে তিনি জানান। এ ছাড়া উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ,জায়গার ভাড়া, মজুরী বৃদ্ধি সবমিলিয়ে প্রতিমা শিল্পীরা বড়ই চিন্তিত বলে জানান। শিল্পীরা উভয়ে বলেন করোনার থাবায় সকল প্রতিমা শিল্পীরা অর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। করোনার মরণ থাবা এবারও সরস্বতি পুজার আরাধনায় বাঁধা হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অনেকে এবার প্রতিষ্ঠানে সরস্বতি পুজা করছেননা বলে জানান। শাহজাদপুর উপজেলার অনেক স্কুল ও কলেজ এর শিক্ষক মহোদয়রা বলেন করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিস কার্যক্রম চললেও শিক্ষার্থী না থাকায় সরস্বতি পুজা করা সম্ভব হয়ত হবে না। এমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মন্তব্য করেছেন।
এদিকে অভিজ্ঞরা বলেছেন করোনার থাবায় প্রতিমা শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্থ বিধায় তাদের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।