মোঃ খলিলুর রহমান সাতক্ষীরা
একই জাতের ধান, একই সাথে কর্ষণ, একই সাথে বপন, একই সাথে কর্তন এই সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হলো সাতক্ষীরায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবকাটি ব্লকের বলাডাঙা বিলে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবীদ মোঃ নুরুল ইসলাম।ধান রোপন যন্ত্র এর ব্যবহার করে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রে-তে বীজ বপন করে ফলন বাড়াতে সমলয় পদ্ধতিতে জমিতে হাইব্রীড তেঁজগোল্ড জাতের বোরো ধানের চাষ শুরু করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে সাতক্ষীরা জেলায় বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে জেলার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ও ঝাউডাঙা, কলারোয়া পৌর ব্লক ও কেরালকাতা ব্ল¬ক, দেবহাটা উপজেলার সদর ব্লক ও তালা উপজেলা সদর ব্লকে ৩০০ একর জমিতে এই সমলয় পদ্ধতিতে ট্রেতে বীজ বপন ও ধান রোপন যন্ত্র মেশিনের সাহায্যে ধানের পাতা রোপনের মাধ্যমে হাইব্রীড তেঁজগোল্ড জাতের বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। আউশ, আমন ও বোরো এই তিন মৌসুমে এ চাষ হয়ে থাকে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটি ব¬কের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কিরন্ময় সরকার জানান, জনসংখা বৃদ্ধির সাথে সাথে কমছে কৃষি জমি। তাই স্বল্প জমিতে অধিক ধান উৎপাদন করে মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সাতক্ষীরায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষাবাদ শুরু হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সমালয় পদ্ধতিতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটি ব¬কের বলাডাঙায় ৫০ একর জমিতে হাইব্রীড তেঁজগোল্ড বোরো ধানের রোপন পদ্ধতি দেখে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, বলাডাঙা গ্রামে স্থানীয় ৫৫ জন কৃষক মাটিভর্তি ট্রে-তে বপন করছেন তেঁজগোল্ড হাইব্রীড জাতের ধানবীজ। সমলয় চাষাবাদের নতুন মাত্রায় মেশিন দিয়ে ৫০ একর জমিতে রোবো ধানের চারা রোপন করা হয়। এবার জেলার চারটি উপজেলায় ৩০০ একর জমিতে এ জাতের ধান রোপন করা হচ্ছে। ট্রে-তে বীজ বপনের ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলা যায়। বিঘা প্রতি ২০ বস্তা বা ৩০ মণ ধান উৎপাদন সম্ভব হবে।
একইভাবে এ চাষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কৃষকদের ৭০ শতাংশ ও অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ৫০ শতাংশ সরকারি অনুদান দেয়া হবে। কৃষির সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল একই জাত ব্যবহার, ট্রে-তে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপন, চারা রোপনে ধান রোপন যন্ত্র ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, আইল ফসল, ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধান সম্ভব হবে এই সমলয় চাষাবাদে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান রোপনের মাধ্যমে ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটে এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করা যাবে। এ বিষয়ে কৃষকদের কারিগরি সুবিধা ও সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তরা।
কৃষক ওমর ফারুক লাল্টু জানান, গত বছর তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মাহমুদকাটিতে তেঁজগোল্ড হাইব্রীড জাতের ধান চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে ওই এলাকার কৃষকদের সাথে তিনি কথা বলেছেন। এ বার তিনি দেড় বিঘা জমিতে এ জাতের ধান লাগিয়েছেন।সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বলাডাঙা গ্রামের হাফিজা খাতুন জানান, এক বিঘা জমি মেশিন দিয়ে রোপন করতে এক লিটার পেট্রোল লাগে। সময় লাগে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। তাই সময় ও খুবই খরচ কম। তিনি এবার ১২ কাঠা জমিতে এ জাতের ধান চাষ করেছেন। একইভাবে কৃষি বিভাগের সহায়তায় ও পরামর্শে দেড় বিঘা জমিতে তেঁজগোল্ড জাতের বোরো ধানের চাষ করার কথা উলে¬খ করে তিনি বলেন, প্রথম চাষ করছেন। ট্রে-তে ধান ফেলে মেশিনে রোপন করা হয়। বিঘা প্রতি ২০ বস্তা ধান হবে। এক বিঘা জমি রোপন করতে ৪-৫ জন শ্রমিক প্রয়োজন মাত্র। ধানের বীজতলা তৈরি থেকে ধান কাটা পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন সময় লাগে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এবার ৫০ একর হাইব্রীড জাতের বোরো ধান রোপন করা হচ্ছে। ৪ হাজার ৫০০ ট্রে-তে হাইব্রীড ধানের বীজতলা লাগানো হয়েছে। সার ও কীটনাশকসহ কর্তন সরকারি উদ্যোগে করা হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, মৌসুমী প্রণোদনার রাইস ট্রান্সপ¬ান্টের আওতায় ১৫০ বিঘা জমিতে সমালয় পদ্ধতিতে হাইব্রীড বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবীদ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, এবার সাতক্ষীরা জেলায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরা ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চারটি উপজেলার ৬টি স্থানে ৩০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে হাইব্রীড ধান চাষ করা হচ্ছে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ১০০ ভাগ কর্ষণ ও ১২ ভাগ কর্তন হলেও রোপন ২ শতাংশ হচ্ছে। কম্বাইন হারভেস্টারের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে সরকার অনুদান দিচ্ছে।