জামালপুর জেলা প্রতিনিধি- দীর্ঘ ১০ মাস ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে সবাইকে ছেলে চলে গেলেন জামালপুর জেলার বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা দুলাল হোসাইন। ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৭ বছর। সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের বড় ছেলে সাংবাদিক সাইমুম সাব্বির শোভন জানান, ২০২১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এছাড়া তিনি কিডনি জটিলতাসহ ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন সাভারের এনাম মেডিকেলে ভারতীয় চিকিৎসক ডা. শ্রাবন কুমার চিন্নিকাটির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভারত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মুম্বাইয়ের সুসরাত হাসপাতালের ডা. সুরেশ আদভানীর আওতায় চিকিৎসা গ্রহণের পর দেশে এসে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কেমোথেরাপী নেন। এরপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে তাকে প্রথমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে ৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শোভন আরো বলেন, তার বাবাকে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্টে পাঠান। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ১৯৬৫ সালের ১০ ডিসেম্বর জামালপুর পৌর এলাকার হাটচন্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। তার বাবার নাম ইদ্রিস আলী এবং মা আনোয়ারা বেগম। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন দুলাল হোসাইন। সাংবাদিক দুলাল হোসাইন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। আর্থিক অভাবের কারণে লেখাপড়া ছেড়ে খুব কম বয়সে সংসারের হাল ধরেন দুলাল হোসাইন। তবে সম্মান ও সফলতার উচ্চ শিহরে পৌছানোর আশায় হাজারো অভাবের পরেও ১৯৮২ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন দুলাল হোসাইন। ১৯৮২ সালে পাক্ষিক জামালপুর প্রবাহ, এরপর ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজকের স্মৃতিতে নিয়োগ পান। জেলা প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক ভোরের ডাকে কাজ শুরু করেন ১৯৮৮ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে দৈনিক সকালের খবর, ১৯৯৭ সালে দৈনিক সংবাদ এবং সর্বশেষ ২০০০ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও সাংবাদিক দুলাল হোসাইন ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর বেসরকারি টিভি বৈশাখী টেলিভিশনে জামালপুর প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে কাজ শুরু করেন। এরপর ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে কাজ করেন দেশ টিভিতে এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৮ মে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে। তার লেখনী, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে মন কেড়েছেন লাখো জামালপুরবাসীর। শুধু সাংবাদিকতায় নয়, সাংবাদিক নেতা হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন গুণী এই সাংবাদিক। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনে সর্বদা সোচ্চার ও কঠোর ছিলেন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। ১৯৯১ সালে জামালপুর প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন সময় জামালপুর প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ২০০২ সালে সর্বপ্রথম জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন দুলাল হোসাইন। এরপর ২০১৮ সালে আবারো জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জামালপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাংবাদিক দুলাল হোসাইন বাবা, স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই ছেলেসহ আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।