মোঃ মজিবর রহমান শেখ,, কয়েকবছর আগেও গ্রামাঞ্চলের কৃষিজীবি মানুষ গরুর পাশাপাশি মহিষ পালনেও বেশ তৎপর ছিলেন ৷ সময়ের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে মহিষ ৷ যেখানে এলাকার কয়েকটি বাড়িতে লালন পালন করা হত মহিষ, সেখানে কয়েকটি গ্রামেও দেখা মিলেনা মহিষ ৷ আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে গবাদি পশু মহিষ ৷ নতুন প্রজন্মের কাছে মহিষ যেন এক বিরল প্রজাতির প্রাণী। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কৃষি ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সার্বিক অবদানের গুরুত্ব বিবেচনায় মোটামুটি ৫০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকেই গরুর পরেই মহিষের স্থান। সাধারণভাবে বর্তমানে মহিষকে এশিয়ার প্রাণী বলা হয়। মহিষ দেখতে কালো, ধুসর অথবা বাদামী রঙের দেখা যায় । কৃষি কাজে কর্ষণের শক্তি হিসেবে, কাছাকাছি দূরত্বে পণ্য পরিবহণের কাজে এবং মানুষের নিকটবর্তী পথ চলাচলে গাড়ি টানার জন্য, অর্থ সাশ্রয়ী ও পরিবেশ দূষণমুক্ত শক্তির প্রযোজনে মহিষের চাহিদা ছিল ব্যাপক। এছাড়াও মহিষের মাংস খাদ্য বস্তু হিসেবে তুলনামূলকভাবে অধিক ননী-সমৃদ্ধ দুধ আর মোটা আঁশযুক্ত মাংসের উৎস হিসেবে অনেক চাহিদা ছিল। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য জৈব সার হিসেবে হাড় ও গোবরের ব্যবহার, মানুষের ব্যবহার্য সৌখিন সামগ্রী তৈরির জন্য শিং, হাড় ও চামড়ার ব্যবহারের জন্য মহিষ পালনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। ভারত উপমহাদেশের মহিষ দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পরিচিত । এজন্য দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতের মহিষকে দুধ উৎপাদনের মেশিন বলা হয়। গরু পালনের তুলনায় মহিষ পালন তুলনামূলকভাবে সহজ আর কম ব্যয় বহুল। গরু পালনের খরচের তুলনায় মহিষ পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থান এবং খাদ্য খরচ অনেকটা কম কারণ মহিষ বালুচর আর নদী বিধৌত বাথান এলাকায় সবুজ ঘাস খেয়ে থাকে। গরুর তুলনায় মহিষের রোগবালাইও অপেক্ষাকৃত কম। মহিষ গরম সহ্য করতে পারেনা এ কারণে কাদামাটি ও পানিতে গড়াগড়ি করতে পছন্দ করে। আরামের জন্য পানি আর ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকতে আরাম বোধ করে। দিনের মধ্যভাগে এবং সূর্যাস্তের কিছুটা আগে মহিষকে বেশ কয়েক ঘন্টা কাদাপানিতে গড়াগড়ি করে অবস্থান করতে দিতে হয়। মহিষ গড়ে ১৫ বছর বাঁচে এবং সমগ্র জীবনচক্রে প্রায় ১৬-১৭টি বাচ্চা প্রদান করে থাকে। ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষক মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসতাম বাপ-দাদাদের সঙ্গী ছিল মহিষ ৷ মহিষ দিয়ে আমরা অনেক মালবাহী গাড়ি টানতাম, জমিতে হালচাষ করাতাম ৷ মহিষ আমাদের কৃষি পরিবারের জন্য উপকারী একটি প্রাণী৷ এটির মাংস পুষ্টিকর ও অনেক সুস্বাদু৷ এখন আর মহিষ দেখা যায় না ৷ ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, কত বছর ধরে মহিষ চোখে দেখতে পাইনি তা মনে আসছেনা ৷ ছোট বেলায় আমাদের বাসায় মহিষ পালন করতাম৷ বিক্রি হওয়ার পর আর কখনও মহিষ চোখে পরেনি ৷ আধুনিকতার ছোঁয়ায় মহিষ এখন বিলুপ্তির পথে ৷ অনেক কিশোর/কিশোরীর কাছে মহিষ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা কেউ কখনও মহিষকে স্বচক্ষে দেখেননি বলে জানান ৷ দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমি বইয়ে নাম শুনেছি ও ছবি দেখেছি মহিষের। কোনদিন স্বচক্ষে দেখা হয়ে উঠেনি ৷ আমি মনে করতাম মহিষ মনে হয় জঙ্গলে বসবাস করেন এমন প্রাণী। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগের মত আর মহিষ পালন করা হয় না ৷ আর মহিষের খামারও সেই ভাবে পরীলক্ষিত হয়না। তবে জেলার কয়েকটি জায়গায় দু’একটি করে মহিষ পালন হয়৷ সময়ের বিবর্তনে এই গবাদি প্রাণীটি হারিয়ে যাচ্ছে।