র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আইনজীবী নিয়োগ দেবে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে কাজ চলছে।
আজ সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে বাংলাদেশ ও দেশটির অভিন্ন বন্ধুদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সেখানে আমাদের দূতাবাস আগে কেন জানতে পারেনি? তারা ব্যাখ্যা দিয়ে বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে গ্যাপ তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা আগেই লবিস্ট নিয়োগ করতে বলেছিলাম। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। এর বাইরে পিআর ফার্ম, আইনজীবী নিয়োগের কথাও বলেছে।
তিনি আরো বলেন, জাপান, ভারত, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব আমাদের বন্ধু। এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেরও ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এই স্যাংশনের বিষয়ে তাদেরকে কাজে লাগানোর জন্য বলেছি।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে পিআর ফার্ম, লবিস্ট ও আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় জানানো হয়, র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় বলেছে, শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করার পরে বাংলাদেশ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য পুনরায় সে সুবিধা চালু করেনি। বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে কোনো দ্বিপক্ষীয় সফর হয়নি। তবে এ বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উচ্চপর্যায়ের সফর আয়োজনের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ভবিষ্যতের জন্য এরকম নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করেছে সংসদীয় কমিটি।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরকম আরো আসতে পারে। দেখা গেল ইউরোপীয় ইউনিয়নও দিল। এজন্য আগে থেকে তৎপর হতে হবে। তিনি বলেন, আগামী এপ্রিলে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেটের মধ্যে মিটিং হবে। এর আগে মার্চে তিনটি সংলাপ হবে। এসব জায়গায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বলেছি। যদি দরকার হয় সংসদীয় কমিটিও যাবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মতো অন্য দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা, তা আগামী বৈঠকে বিস্তারিত উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট সেবা সহজ করতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা উইং খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ-মালদ্বীপ বাণিজ্য বৃদ্ধিকল্পে দ্রুত ও সরাসরি নৌ যোগাযোগ স্থাপন করার ব্যাপারেও কমিটি থেকে সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি ফারুক খানের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মো. আব্দুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত ও নাহিম রাজ্জাক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।