এ.এইচ কামরুল, চুয়াডাঙ্গা:
বখাটের উৎপাতে আত্মহণনের পথ বেছে নেয়া মাদ্রাসাছাত্রী মাছুমা আক্তারের পরিবারের মাঝে চলছে শোকের মাতম। ছোট মেয়েকে অকালে হারিয়ে বাকী ৩ মেয়েকে নিয়ে ফাতেমা খাতুন চাপা কান্না ধরে রাখতে পারছে না। এলাকার অনেকে তাদের সাথে দেখা করতে গেলেও শান্তনার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে সবাই। ময়নাতদন্ত শেষে (২২মার্চ) সোমবার দুপুরে মাছুমার মৃতদেহ হকপাড়ার নিজ বাড়ীতে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। বাবা-মা-৩ বোন ও আত্মীয়স্বজনের আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার আলেয়া মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাছুমা আক্তারের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে দাফণকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। সোমবার বাদ মাগরীব রেল ষ্টেশন সংলগ্ন জান্নাতুল মওলা কবরস্তান জামে মসজিদে জানাযা শেষে ওই কবরস্তানেই তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে, বখাটে কালামের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে মাদববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে আলেয়া মাদ্রসার শিক্ষক, নিহত মাছুমার সহপাঠী ও এলাকাবাসী। সোমবার সকালে নিহত মাছুমা আক্তারের বাড়ীর সামনে তারা ওই কর্মসূচি পালন করে।
অপরদিকে, অভিযুক্ত বখাটে কালামকে এখনও গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে এবং অব্যাহত রেখেছে।
তবে, বখাটে কালামকে নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভের শেষ নেই। উশৃঙ্খল হওয়ায় তাকে নিয়ে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। কালাম তার নিজ এলাকার মানুষের সাথেই অকারণে খারাপ আচরণ করতো। যখন তখন, কারণে-অকারণে মানুষের সাথে দ্বন্দ্ব ফ্যাসাদ বাদিয়ে থাকতো।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের আরামপাড়ার মোবারক হোসেন মুবার ছেলে কালাম। ছোট থেকেই মাছপট্রিতে লেবারের কাজ করেই তার বড় হয়ে ওঠা। সেই থেকেই সে বখাটে কালাম নামে পরিচিত। বছর চারেক ধরে হকপাড়ার আমিনুল ইসলামের মেয়ে মাছুমা আক্তারের পিছু নেয় কালাম। বিভিন্ন সময় তাকে নানানভাবে উত্যক্ত করতো।
গোপন একটি সুত্র থেকে জানা গেছে, নারী লোভি ও বখাটে কালাম বছর দেড়েক আগে বিয়ে করে আরামপাড়ার (গমপট্রি এলাকার) খলিলের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে স্বর্ণালীকে। আরামপাড়ার হীরা কাজীর মাধ্যমে তাদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিয়ের ঘটনা গোপণ রেখেই তারা দিনের পর দিন পার করতে থাকে। এমনকি কালাম-স্বর্ণালীর বিয়ের ঘটনা প্রতিবেশীসহ এলাকার কেউই জানতো না। স্বর্ণালীকে বিয়ের পরও মাছুমার পিছু ছাড়ে নি কালাম। বিভিন্ন সময় তাকে উত্যক্ত করতো। প্রতিবাদ করতে গেলে নানানভাবে হুমকী-ধামকী দিয়ে থকতো। এমনকি মাছুমার শরীরে এসিড মারার হুমকী পর্যন্ত দেয় কালাম। এমন অভিযোগও মাছুমার পরিবারের।
গত ১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিদিনের মতো তার বাবার চায়ের দোকান খুলে বসে মাছুমা আক্তার। সেখানে যায় কালাম। দোকানের এক খরিদ্দারকে দেখে কালামের মাথায় কাজ না করলে সে ওই খরিদ্দারের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে। মাছুমা এর প্রতিবাদ করলে তাকে চড়-থাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারে কালাম। বিষয়টি জানতে পেরে মাছপট্রি এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছে বিচার চেয়ে তার ফলাফল পায় নি মাছুমার বাবা আমিনুল ইসলাম। এভাবেই কালাম প্রতিনিয়তই মাছুমাকে উত্যক্ত করে অতিষ্ট করে তুলেছিল। সেই অপমান সইতে না পেরে রোববার বেলা ৪টার দিকে নিজের ঘরের আড়ার সাথে ওড়না বেঁধে গলাই পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে মাছুমা আক্তার। ওই ঘটনায় আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মৃত্যুর আগে মাছুমা আক্তার তার খাতায় ৪ পৃষ্টার একটি নোট লিখে যায়। যা বর্তমানে পুলিশ জব্দ করেছে। কি লিখেছিল মাছুমা ওই কাগজে?
এদিকে, মাছুমা আক্তারের আত্মহণনের ঘটনায় তার বাবা-মা-বাকী ৩ বোন, মাদ্রাসার শিক্ষক-তার সহপাঠিসহ এলাকাবাসী বখাটে কালামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। তাদের দাবী, আর কোন বখাটের উৎপাতে মাছুমার মতো তাঁজা প্রাণ যেন অকালে ঝড়ে না যায়।
রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত বখাটে কালামকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে নি। তবে, জিজ্ঞাবাদের জন্য অভিযুক্ত বখাটে কালামের বাবা-মাকে থানায় নেয়া হয়েছে বলে এলাকার অনেকেই বলেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মৃত্যুর আগে মাছুমার নিজ হাতে লিখে যাওয়া ৪ পৃষ্টার নোট আমরা জব্দ করে হিবাজতে নেয়া হয়েছে। তাতে কি লেখা ছিল তদন্তের স্বার্থে সেটা এখনই বলা যাবে না। মাসুমার নিজ হাতে লেখা সুইসাইড নোট মামলার তদন্তে ও অপরাধ প্রমাণে সহায়ক হবে। অভিযুক্ত কালামকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাদীর লিখিত এজাহারে দেয়া অভিযোগের বিষয়টি সরেজমিন খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিলেছে।