মোঃউজ্জাল হোনেন,যশোর ব্যুরো প্রধানঃ
যশোরাঞ্চলে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত অবশেষে একনেকে পাশ হয়েছে যশোর শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রকল্প। মণিরামপুর উপজেলায় প্রায় ৫০ একর জমির উপর ১শ’৯৮ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের এ একাডেমি নির্মিত হবে।
এটি চালু হলে যশোরাঞ্চলের তথা খুলনা বিভাগের মানুষের সামনে খুলে যাবে সম্ভাবনার দুয়ার। কেননা, এখানে হবে গ্রাম ও কৃষি ভিত্তিক উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা, ট্রেনিং, নতুন নতুন উৎপাদন এবং উদ্ভাবন। যাতে এ বিভাগের ৫৯ উপজেলার মানুষ অগ্রাধিকার পাবে বলে গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি।
মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে সংযুক্ত থেকে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় যশোরের সর্বস্তরের জনসাধারণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি। একই সাথে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতিও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা ও যশোরের একাধিক সূত্র জানায়, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথার্থই অনুভব করেছিলেন যে, গ্রামভিত্তিক বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কোন বিকল্প নেই। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালে প্রথম পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রশিক্ষণ, গবেষণা, প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনা ও কৃষিভিত্তিক পরামর্শ সেবা প্রদানে ‘শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি যশোর’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহত্তর যশোরবাসীর শিক্ষা ও প্রায়োগিক গবেষণার উন্নয়নে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি পাশ হওয়ায় যশোরসহ পার্শ¦বর্তী জেলার শিক্ষা ও গবেষণায় কাঙ্খিত স্বপ্নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আধুনিক গবেষণা ও কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার বাবা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা শেখ জহুরুল হকের নামে যশোরের এ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির নামকরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার টেকসই উন্নয়নের জন্য এ একাডেমি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি গত ১৯ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তা অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ), বগুড়া।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা তুলনামূলকভাবে অনগ্রসর ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি এবং গবেষণা প্রয়োগিক গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য এ অঞ্চলে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। কৃষি ও অকৃষি পেশায় দক্ষ ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী জনগোষ্ঠী তৈরির মধ্য দিয়ে পল্লী উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে, একটি প্রশাসনিক-কাম অনুষদ ভবন নির্মাণ, একটি ক্যাফেটেরিয়াসহ বিনোদন কেন্দ্র ও গেস্ট হাউজ, একটি পুরুষ হোস্টেল এবং একটি মহিলা হোস্টেল, একটি টেকনিক্যাল এবং জেনারেল স্কুল ও কলেজ ভবন, ডিজি বাংলো নির্মাণ, একটি ফ্যাকাল্টি কোয়ার্টার ও একটি স্টাফ কোয়ার্টার, একটি মেডিকেল সেন্টার, ৬টি ফার্ম (ফসল, ডেইরি, পোলট্রি, মৎস্য, টিস্যু কালচার এবং নার্সারি) ইউনিট স্থাপন, সীমানা প্রাচীর, গেইট, গার্ড, করিডোর, মসজিদ, রাস্তা ও ড্রেনেজ নির্মাণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার বাবা শেখ জহুরুল হক যশোরে চাকরি করতেন। তার মৃত্যুর পর সেখানেই সমাহিত করা হয়। এজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর যশোরের মণিরামপুরের পল্লী উন্নয়ন একাডেমির নাম শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, যশোর নামকরণ করার বিষয়ে অনুমোদন দেয়।