মমিনুল হক রাকিবঃ
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে “কন্টেন্ট” শব্দট এক সূতায় গাঁথা। বর্তমান সমাজের অন্যতম ট্রেন্ডিং একটি বিষয় হলো কন্টেন্ট৷ কন্টেন্ট এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রমোশন থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া তে প্রচারণা বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এর চাহিদাও বেশ বর্তমানে। লিখতে তো কমবেশি আমরা সবাই পারি, তার সাথে কনটেন্ট এর ভিন্নতা কোথায়? কিভাবে হতে পারি একজন দক্ষ কনটেন্ট ক্রিয়েটর? এমন হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে নিজেকে একজন দক্ষ কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মোঃ রাফাত হাসান।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া মোঃ রাফাত হাসান স্কুল জীবনেই লেখালেখির জগতে পদচারণ ২০১৯ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ” ল্যাংগুয়েজ লীগে” স্ক্রিপ্টরাইটার হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী হওয়ার পর লেখালেখির ভুবনে যে আত্মবিশ্বাস তিনি অর্জন করেন তা সময়ের পরিক্রমায় তা যেন আরও শাণিত হয়। পরবর্তীতে তিনি অংশ নেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাইটিং কম্পিটিশন, বুক রিভিউ, কুইজ, পাবলিক স্পিকিং এর মত অসংখ্য কম্পিটিশনে এবং নিজের অর্জনের ঝুলিতে যুক্ত করেন একেক পর এক পুরস্কার।
বাবা নৌবাহিনীতে চাকরি করায় তাঁর শৈশবের প্রায় তেরোটি বছর কেটেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পতেঙ্গায়। প্রকৃতির খুব কাছ থেকে বেড়ে ওঠে তিনি জীবনকে যেন উদারভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাঁর পড়াশোনার শুরুটা সেই চট্টগ্রামের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এবং কলেজ, চট্টগ্রামেই। সেখানে অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরপর ঢাকা চলে আসতে হয় তাকে। ২০১৪ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ,ঢাকা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সর্বশেষ, কৃষিশিক্ষায় এশিয়ার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সবুজস্বর্গ খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।
নিজের ক্যাম্পাসের মধ্যে একাডেমিকস এর পাশাপাশি প্রথমবর্ষ থেকেই কালচারাল ক্লাব,ডিবেট ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব এবং সাইক্লিস্ট ক্লাবের সাথে যুক্ত হন। সর্বশেষ, নিজের ক্যাম্পাসের ৬০ বছরের ইতিহাসে প্রথম অনলাইন রেডিও স্টেশন ‘BAU RADIO’ এর স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন । প্রায় ৭০ জন স্বপ্নসারথীকে সাথে নিয়ে ২০২০ এর জুন মাসে যাত্রা শুরু করেছে এই প্ল্যাটফর্মটি।
উদ্যোমী এই তরুণ স্মার্টিফায়ার একাডেমীতে কাজ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এসোসিয়েট হিসেবে। বর্তমানে কাজ করছেন দেশসেরা পত্রিকা বিশারদ খুঁজে নেওয়ার আয়োজক ন্যাশনাল নিউজপেপার অলিম্পিয়াডের হেড অফ কনটেন্ট হিসেবে।এড টেক কোম্পানি ‘মেন্টোরিয়ান’ – এ কাজ করছেন ইন্সট্রাক্টর হিসেবে। তার কোর্স “ব্লু-প্রিন্ট অব কন্টেন্ট ক্রিয়েশন” চলে গিয়েছে শত শত তরুণ কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের হাতের মুঠোয়!
রাফাত আরও যুক্ত আছেন ‘ফোরকাস্ট’ এর সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেট ক্রিয়েশনের যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে। জানা অজানা অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কন্টেন্ট ডেভেলপার, কন্টেন্ট এডিটর এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে। কন্টেন্ট নিয়ে কাজের পাশাপাশি হোস্টিং কিংবা প্রেজেন্টার হওয়ার প্রচণ্ড শখ থেকে করেছেন অনেক ভয়েসওভার-এর কাজ । যার কল্পনাপ্রসূত হিসেবেই নিজের ক্যাম্পাসের রেডিও স্টেশনের জন্ম হয়েছে বলা যায় একাংশে।
এবারের বইমেলায় পারসোনাল ব্র্যান্ডিং এবং টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর দুটি ননফিকশন বইয়ে প্রত্যক্ষ ভুমিকা রয়েছে রাফাতের। নব্বই দশকের নস্স্টালজিয়ায় গান শুনতে পছন্দ করেন সৃজনশীল এই তরুণ। সময় পেলেই ছুটে যান প্রকৃতির কাছে, অবসর কাটান মুভি- সিরিজ দেখে কিংবা পুরনো দিনের গান শুনে। মঞ্চ নাটকেও অভিনয়ে বেশ পটু রাফাত।
অবশ্য ব্যস্ততাতেই দিন কাটে তার বেশিরভাগ সময়। ব্যস্ততার অন্যতম অনুষঙ্গ ইউনিসেফ। সামাজিক সচেতনতামূলক বিভিন্ন ক্যাম্পেইন আয়োজনের পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে গুজবের অবসান ঘটাতে বাংলাদেশের মাত্র ১৬ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে গেছেন তাদের মধ্যে একজন রাফাত হাসান। শৈশবে প্রকৃতির কাছে তিনি উদারতার যে শিক্ষা পান তা সেচ্ছাসেবামুলক কাজে প্রয়োগ করে আত্মতৃপ্তি পান রাফাত।
আগামীদিনের পরিকল্পনায় তিনি গ্রাজুয়েশন শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে চান। এরপর নিজের পাকাপোক্ত জায়গা তৈরি করে নিতে চান দেশের কর্পোরেট সেক্টরে। ক্যারিয়ার নিয়ে তার ভাবনার মুলসূর হলো নিজেকে এমনভাবে তৈরি করা যেন কর্পোরেট দুনিয়ার তীব্র প্রতিযোগিতায় কখনো পিছনে পড়তে না হয়৷ সেই লক্ষ্যে তিনি অবিচল।
শুধু নিজেকে নিয়ে নয় দেশকে নিয়েও ভাবেন রাফাত। তবে তার মতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে দেশের ইয়ুথদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেন বিশ্বের প্রতিটি অঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্যগাথা রচনা করতে পারে তারাই৷
এজন্য তিনি মনে করেন একাডেমিক এর পাশাপাশি কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসে জোর দেওয়া প্রয়োজন। কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে নিজের দক্ষতা ইয়ুথদের কাছে পৌঁছে দিতে ” Blueprint of Content Creation” শিরোনামে কোর্স রয়েছে রাফাতের।
মোঃ রাফাত হাসান, সম্ভাবনাময় এই তরুণ কন্টেন্ট রাইটারের গল্পের ইতি টানবো তারই খুব প্রিয় একটি উক্তি দিয়ে-” We thrive for peace and harmony in such a world where facts and fiction coexist ” উক্তিটি নেওয়া তারই পেজ ” Rafat for Real ” থেকে যেখানে নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ নানা বিষয় গল্পের ছলে তিনি তুলে ধরেন।